দুবরাজপুরে পুলিস বাড়াবাড়ি করেনি : মমতা
গতকালের দুবরাজপুরের লোবা গ্রামের ঘটনা নিয়ে অবশেষে আজ মহাকরণে মুখ খুললেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়। নন্দীগ্রাম-সিঙ্গুরের সঙ্গে এই ঘটনার কোন তুলনাই চলে না বলে তিনি জানালেন। কারণ এর সঙ্গে জোর করে জমি দখলের কোনও সম্পর্ক নেই। তার সঙ্গেই গতকালের ঘটনা নিয়ে তিনি দুঃখপ্রকাশও করেছেন। ঘটনার কথা স্বীকার করে নিলেও তিনি জানিয়েছেন দুবরাজপুরে পুলিস বাড়াবাড়ি করেনি। তিনি জানিয়েছেন তাঁর কাছে আসা খবর অনুযায়ী স্থানীয় পুলিস রাজ্য পুলিসকে না জানিয়ে ঘটনাস্থলে গেলেও গুলি চালায়নি। তবে ঘটনা যে একটা ঘটেছে সে কথাও স্বীকার করে নিয়েছেন তিনি।
গতকালের দুবরাজপুরের লোবা গ্রামের ঘটনা নিয়ে অবশেষে আজ মহাকরণে মুখ খুললেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়। নন্দীগ্রাম-সিঙ্গুরের সঙ্গে এই ঘটনার কোন তুলনাই চলে না বলে তিনি জানালেন। কারণ এর সঙ্গে জোর করে জমি দখলের কোনও সম্পর্ক নেই। তার সঙ্গেই গতকালের ঘটনা নিয়ে তিনি দুঃখপ্রকাশও করেছেন। ঘটনার কথা স্বীকার করে নিলেও তিনি জানিয়েছেন দুবরাজপুরে পুলিস বাড়াবাড়ি করেনি। তিনি জানিয়েছেন তাঁর কাছে আসা খবর অনুযায়ী স্থানীয় পুলিস রাজ্য পুলিসকে না জানিয়ে ঘটনাস্থলে গেলেও গুলি চালায়নি। তবে ঘটনা যে একটা ঘটেছে সে কথাও স্বীকার করে নিয়েছেন তিনি। গ্রামবাসীদের কোন দোষ নেই জানিয়ে তাঁর স্বভাব মতোই মুখ্যমন্ত্রী এই ঘটনার পিছনে প্ররোচনা রয়েছে বলেও জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন পুরো ঘটনাটি `অতন্ত্য রহস্যজনক`। এদিকে, ঘটনা কেন ঘটল এ বিষয়ে তদন্তের নির্দেশ দিলেও লোবা গ্রামে গিয়ে বুধবারই শিল্পমন্ত্রী ঘোষণা করে দেন ঘটনার পিছনে কংগ্রেস এবং সিপিআইএমের হাত রয়েছে।
মহাকরণের আজকের সাংবাদিক সম্মেলনে প্রথম থেকেই দুবরাজপুরের জমি আন্দোলনের ঘটনাতে যেন নন্দীগ্রামের ছায়া না দেখা যায় সে বিষয়ে সতর্ক ছিলেন মমতা। গ্রামবাসীদের কোনও দোষ নেই বলেও তৃণমূল সুপ্রিমো জানিয়েছেন, তাঁরাই পুলিসকে আক্রমণ করেছেন। গ্রামবাসীদের উপর পুলিসের গুলি চালানর ঘটনাও তিনি অস্বীকার করেছেন। পুরো ঘটনার প্রশাসনিক তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। জানিয়েছেন মূলত তিনটি বিষয় নিয়ে তদন্ত হবে। প্রথমত, আসলে ঠিক কী ঘটেছিল। দ্বিতীয়ত, কাউকে কিছু না জানিয়ে কেন স্থানীয় পুলিস ঘটনাস্থলে গিয়েছিল? তৃতীয়ত, পুরো ঘটনার পিছনে কারা প্ররোচনা জুগিয়েছে?
গতকালের ঘটনার পর আজও থমথমে বীরভূমের দুবরাজপুরের লোবা গ্রাম। আহতদের দেখতে সিউড়ি হাসপাতালে যাচ্ছেন শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। তবে লোবা গ্রামে যাবেন না তিনি। অন্যান্য রাজনৈতিক দলের প্রতনিধিরাও আজ লোবা গ্রাম পরিদর্শনে যাচ্ছেন। সিপিআইএম, কংগ্রেস ও বিজেপির প্রতিনিধিরা আজ লোবা গ্রামে যাবেন।
মঙ্গলবার বীরভূমের দুবরাজপুরে প্রথমে গুলি চালনার কথা অস্বীকার করলেও পরে ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে গুলি চালানোর ঘটনা কার্যত স্বীকার করে নেয় রাজ্য সরকার। তবে ঘটনায় বেশ অসন্তুষ্ট হয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। প্রশাসনিক তদন্তের নির্দেশও দেওয়া হয়েছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তরফে। বীরভূম জেলার এসপিকে ছুটিতে যাওয়ার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে বলে জানা গিয়েছে।
মঙ্গলবার বীরভূমে জমি আন্দোলন ঠেকাতে চলায় পুলিসের গুলি। গুলিতে জখম হয়েছেন ৬ জন গ্রামবাসী। আহতদের সকলকেই স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এঁদের মধ্যে দু`জনের অবস্থা সঙ্কটজনক। মহাকরণে স্বরাষ্ট্রসচিব অবশ্য পুলিসের গুলি চালানোর ঘটনা অস্বীকার করেন।
দুপুরে দুবরাজপুরে পুলিস-গ্রামবাসী সংঘর্ষের কথা স্বীকার করে নিলেও মহাকরণে দাঁড়িয়ে পুলিসের গুলি চালনার ঘটনা অস্বীকার করেন স্বরাষ্ট্রসচিব বাসুদেব বন্দ্যোপাধ্যায়। এমনকী হাসপাতাল থেকে পাওয়া মেডিকাল রিপোর্টেও `বুলেট ইনজ্যুরি`র উল্লেখ নেই বলে জানান তিনি। একইসঙ্গে ২৭ জন পুলিসের আহত হওয়ার ঘটনা উল্লেখ করে তিনি বলেন, "এর থেকেই বোঝা যায় যে পুলিস যথেষ্ট ধৈর্যের পরিচয় দিয়েছে।" তাহলে পুলিস কীভাবে গ্রামবাসীদের আক্রমণ মোকাবিলা করল? সাংবাদিকের এই প্রশ্নের কোনও সদুত্তর মিলল না স্বরাষ্ট্রসচিবের কাছ থেকে। তার কিছুক্ষণ আগেই ২৪ ঘণ্টার পক্ষ থেকে যখন বীরভূমের তৃণমূল সাংসদ শতাব্দী রায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয় তিনি বলেন, দুবরাজপুরে পুলিস গুলি চালিয়েছে। ঘটনাটি সমর্থনযোগ্য নয় বলেও মন্তব্য করেন তিনি। তবে স্বরাষ্ট্রসচিবের সাংবাদিক বৈঠকের পরেই ১৮০ ডিগ্রি অবস্থান পরিবর্তন করেন শতাব্দী দেবী। মহাকরণে বাসুদেব বাবুর মন্তব্যের পরে সাংসদের সঙ্গে আবার যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, "আমি জানি গুলি চলেনি।"
দুবরাজপুরে পুলিস আচমকা কেন গুলি চালালো সে প্রশ্ন তুলেছেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র। গোটা ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্তের দাবি জানিয়েছেন তিনি। স্বরাষ্ট্রসচিব অস্বীকার করলেও পুলিসই এদিন গুলি চালিয়েছে বলে দাবি করেন বিরোধী দলনেতা। ঘটনার সিবিআই তদন্তের দাবি করেছে প্রদেশ কংগ্রেস।
বীরভূমের দুবরাজপুরের লোবা গ্রামে কয়লা উত্তোলন প্রকল্প ঘিরে স্থানীয় গ্রামবাসীদের মধ্যে অসন্তোষ জমছিল অনেকদিন ধরেই। দীর্ঘদিন ধরে কয়লা উত্তোলন প্রকল্প ঘিরে ওই এলাকায় উত্তেজনাও বাড়ছিল। সরকারের তরফ থেকে একটি বেসরকারি সংস্থাকে ওই জমি লিজ দেওয়া হয়। কিন্তু জমির দাম নিয়ে ক্ষুব্ধ ছিলেন গ্রামবাসীদের একাংশ। ভূমিরক্ষা কমিটির নামে আন্দোলন শুরু করেন তারা। আটকে রাখেন বেসরকারি সংস্থার কয়েকটি মেশিন। আজ সকালে মেশিনগুলি বার করতে যায় পুলিস। তার আগেই গ্রামে ঢোকার রাস্তা কেটে দেওয়া হয়েছিল বলে অভিযোগ। পুলিসের সঙ্গে বচসা বাধে গ্রামবাসীদের। পরে ব্যাপক সংঘর্ষ বাধে দুপক্ষের। অভিযোগ, পুলিস গুলি চালায়। আহত গ্রামবাসীদের প্রথমে সিউড়ি হাসপাতাল ও পরে বর্ধমান মেডিকাল কলেজে ভর্তি করা হয়।
অন্যদিকে, গ্রামবাসীদের ছোঁড়া তির ও ইঁটের আঘাতে বেশ কয়েকজন পুলিসকর্মীও আহত হয়েছেন। পুলিসের বেশ কয়েকটি জাড়িতে ভাঙচুর চালানো হয়েছে বলেও অভিযোগ।