মেডিক্যাল কলেজে এক ডাক্তারকে জাত তুলে অপমান সহকর্মীর, সব জেনেও মুখে কুলুপ স্বাস্থ্য দফতরের

দিনের পর দিন জাত তুলে এক ডাক্তারকে অপমান করা হচ্ছে! অপমান যাঁরা করছেন তাঁরাও ডাক্তার! কোথাকার ঘটনা জানলে অবাক হবেন আরও। খোদ কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের এক ডাক্তার সহকর্মীর বিরুদ্ধে এই অভিযোগ করেছেন। সব জেনেও মুখে কুলুপ এঁটেছে স্বাস্থ্য দফতর।

Updated By: Jun 20, 2015, 09:23 PM IST
মেডিক্যাল কলেজে এক ডাক্তারকে জাত তুলে অপমান সহকর্মীর, সব জেনেও মুখে কুলুপ স্বাস্থ্য দফতরের

ব্যুরো: দিনের পর দিন জাত তুলে এক ডাক্তারকে অপমান করা হচ্ছে! অপমান যাঁরা করছেন তাঁরাও ডাক্তার! কোথাকার ঘটনা জানলে অবাক হবেন আরও। খোদ কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের এক ডাক্তার সহকর্মীর বিরুদ্ধে এই অভিযোগ করেছেন। সব জেনেও মুখে কুলুপ এঁটেছে স্বাস্থ্য দফতর।

কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের প্যাথলজি বিভাগের চিকিত্‍সক জয়ন্ত সরকার। তাঁর অপরাধ, এক সহকর্মীর বিরুদ্ধে হাজিরা সংক্রান্ত অনিয়মের অভিযোগে বিভাগীয় প্রধানের কাছে RTI-এর আওতায় তথ্য চেয়েছিলেন তিনি। জয়ন্তবাবুর অভিযোগ, এরপর থেকেই ডিপার্টমেন্টের কয়েকজন সিনিয়র চিকিত্‍সক তাঁকে কটূক্তি করা শুরু করেন। গত বছরের সাতাশে সেপ্টেম্বর পরিস্থিতি সীমা ছাড়িয়ে যায়। সকলের সামনে সহকর্মী চিকিত্‍সক নির্মল ভট্টাচার্য তাঁকে জাত তুলে অপমান করেন বলে অভিযোগ করেছেন জয়ন্ত সরকার।

তাঁর অভিযোগ, সে দিন নির্মল ভট্টাচার্য তাঁকে বলেন, তিনি স্ক্যানারের নীচে আছেন। কেন স্ক্যানারের নীচে জানতে চাইলে উত্তর আসে, মৌচাকে ঢিল মেরেই বিপদ হয়েছে। যাকে খুশি অভিযোগ জানানো হোক না কেন জয়ন্ত সরকারকে সরাতে দু-মিনিট লাগবে বলে জানিয়ে দেন নির্মল ভট্টাচার্য। জয়ন্ত সরকার বলেন, এতে ডিপার্টমেন্টের পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। উত্তর আসে, ডিপার্টমেন্টের পরিবেশ আগেই নষ্ট হয়েছে। তাঁর নাকি এই ডিপার্টমেন্টে থাকার যোগ্যতা নেই।

ডক্টর সরকার প্রশ্ন করেন, কেন তাঁকে এ ভাবে অপমান করা হচ্ছে? কেন হয়রান করা হচ্ছে? কেন মানসিক চাপ তৈরি করা হচ্ছে? জয়ন্তবাবুর অভিযোগ, উত্তরে ডক্টর ভট্টাচার্য তাঁকে জাত তুলে অপমান করেন। বলেন, সংরক্ষণ থাকাতেই দফতরের এই অবস্থা। ডক্টর সরকারের কেরিয়ার শেষ করে দেবেন তিনি।

উনত্রিশে সেপ্টেম্বর মেডিক্যাল কলেজের প্রিন্সিপালকে চিঠি দিয়ে অভিযোগ জানান ডক্টর জয়ন্ত সরকার। ঘটনার বিহিত চান তিনি।   

এগারোই অক্টোবর সল্টলেকের ময়ূখ ভবনে ন্যাশনাল কমিশন ফর সিডিউল কাস্টে চিঠি দেন ডক্টর সরকার। বলেন, প্যাথলজি
ডিপার্টমেন্টের মধ্যে ডক্টর নির্মল ভট্টাচার্য জাতপাতের প্রসঙ্গ তুলে তাঁকে অপমান করেন। বিভাগীয় প্রধান প্রফেসর সর্বাণী চট্টোপাধ্যায় মিটিং ডেকে তাঁকেই গোটা ঘটনার জন্য দায়ী করেন এবং কোথাও কোনও অভিযোগ না করার জন্য চাপ দেন।

চলতি বছরের তেইশে জানুয়ারি ন্যাশনাল কমিশন ফর সিডিউল কাস্ট স্বাস্থ্য ভবনকে চিঠি দেয়। বলা হয়, তিরিশ দিনের মধ্যে এ বিষয়ে খোঁজ খবর নিয়ে কমিশনকে জানাতে হবে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে উত্তর না পেলে সংবিধানের ৩৩৮ ধারা অনুযায়ী ডিরেক্টর হেলথ সার্ভিসেসকে সমন পাঠিয়ে তলব করা হবে।

কমিশনের চিঠি পেয়ে মেডিক্যাল কলেজ তিন সদস্যের কমিটি গঠন করে। সাতই মে ওই কমিটির সামনে তাঁকে হাজির থাকতে বলা হয়। কিন্তু, যাঁর বিরুদ্ধে ন্যাশনাল কমিশন ফর সিডিউল কাস্টে জয়ন্তবাবু অভিযোগ করেছিলেন, প্যাথলজি ডিপার্টমেন্টের সেই প্রধান সর্বাণী চট্টোপাধ্যায় কমিটিতে থাকায় তিনি হাজির হননি। মেডিক্যাল কলেজের প্রিন্সিপালকে সে কথা জানিয়েও দেন ডক্টর সরকার।

রাজ্যের অনগ্রসর শ্রেণী কল্যাণ মন্ত্রীকেও চিঠি দিয়ে বিচার চেয়েছেন ডক্টর সরকার।

ঘটনার পর কেটে গেছে ন-মাস। কোথাও থেকেই এখনও পর্যন্ত কোনও প্রতিকার পাননি তিনি।

     

.