চিকিত্সায় গাফিলতিতে মৃত্যুর অভিযোগ কলকাতার ৩ নামি হাসপাতালের বিরুদ্ধে
মোটা টাকা নিয়েও ঠিক কী কী কারণে চিকিত্সায় পরিষেবায় খামতি থাকল, তদন্তে উঠে এল চাঞ্চল্যকর তথ্য।
নিজস্ব প্রতিবেদন: একই দিনে শহরের ঝাঁ চকচকে কেতাদুরস্ত বেসরকারি হাসপাতালের বিরুদ্ধে উঠে এল বিস্ফোরক অভিযোগ। অ্যাপোলো, আমরি ও উডল্যান্ডস- শহরের তিনপ্রান্তে ৩ হাসপাতালের বিরুদ্ধে চিকিত্সায় গাফিলতির অভিযোগে সরব হলেন রোগীর আত্মীয়রা। মোটা টাকা নিয়েও ঠিক কী কী কারণে চিকিত্সায় পরিষেবায় খামতি থাকল, তদন্তে উঠে এল চাঞ্চল্যকর তথ্য।
আরও পড়ুন: জানুয়ারি শেষেই কি শীত বিদায়? কী বলছে হাওয়া অফিস
দৃশ্য ॥১
সঙ্কটজনক অবস্থা শিশুর, প্রবল শ্বাসকষ্ট। সেই অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি থাকা সত্ত্বেও জুটল না অক্সিজেন! যতক্ষণে অক্সিজেনের ব্যবস্থা হয়, ততক্ষণে মৃত্যু হয়েছে দু'বছরের শিশুটির। এঘটনা ঘিরে উত্তপ্ত মুকুন্দপুরের নামি বেসরকারি হাসপাতাল। গত রবিবার সেখানে ভর্তি করা হয়েছিল ঐত্রেয়ী দে-কে। জ্বরের সঙ্গে শ্বাসকষ্টও ছিল। আজ সকালে একটি অ্যান্টিবায়োটিক ইঞ্জেকশন দেওয়ার পরই তার অবস্থার অবনতি হয়। অভিযোগ, খিঁচুনি শুরু হয় শিশুটির। শ্বাসকষ্ট আরও বেড়ে গেলে অক্সিজেনের খোঁজ পড়ে। কিন্তু সময়মতো তা দেওয়া যায়নি। অভিযোগ, নলে অক্সিজেন ছিল না। এমনকি মাস্কও খুঁজে পাওয়া যায়নি। যতক্ষণে সে সব পাওয়া যায়, ততক্ষণে সব শেষ। এরপরই ব্যাপক উত্তেজনা ছড়ায় হাসপাতালে। পূর্ব যাদবপুর থানায় হাসপাতালের বিরুদ্ধে চিকিত্সায় গাফিলতির অভিযোগ দায়ের করেছে শিশুর পরিবার।
দৃশ্য ২
বিনা চিকিত্সায় রোগীর মৃত্যুর অভিযোগে উত্তপ্ত হয়ে উঠল উডল্যান্ডস হাসপাতাল। মৃতের নাম গৌতম পাল। ১৫ জানুয়ারি মা ফ্লাইওভারের ওপর বাইক দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হন বছর ৩৪-এর গৌতম। বাঁ হাতে-ও পায়ে গুরুতর আঘাত ছিল। তারপর থেকে উডল্যান্ডসে ভর্তি ছিলেন গৌতম। সোমবার সকালে মৃত্যু হয় তাঁর। পরিবারের অভিযোগ, দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত গৌতম পালের কোনও চিকিত্সাই হয়নি। উল্টে, তাঁদের মৃত্যুর কারণও জানানো হয়নি। এরপরই দেহ নিয়ে আলিপুর রোড অবরোধ করেন পরিবারের আত্মীয়রা। উত্তাল হয়ে ওঠে উডল্যান্ডস।
আরও পড়ুন: বিয়ের ফটোগ্রাফারের প্রতারণা, ২ বছর পরও মিলল না ছবি
দৃশ্য ৩
ফুসফুসের ক্রনিক সমস্যা। ভর্তি করে নিন, হাতজোড় করে অনুরোধ করছেন রোগী নিজেই। তারপরও সাড়া দিল না হাসপাতাল। পরিবারের অভিযোগ, কার্যত বিনা চিকিত্সায় মারা গেলেন রোগী। মর্মান্তিক এঘটনা অ্যাপোলো হাসপাতালের। ফুসফুসের সমস্যায় ভুগছিলেন বছর চুয়ান্নর অলোক দাস। গতকাল রাতে নিজের বাড়িতেই অসুস্থ হয়ে পড়েন। অ্যাপোলোয় নিয়ে আসা হয়। কিন্তু, হাসপাতাল জানিয়ে দেয় বেড নেই। ভর্তি নেওয়া সম্ভব নয়। অলকবাবু নিজে পকেট থেকে টাকা বের করে অনুরোধ করেন ভর্তি নেওয়ার। দেড়ঘণ্টা টানাপোড়েনের পরও ভর্তি করা হয়নি অলকবাবুকে। শেষপর্যন্ত, অজ্ঞান হয়ে যান তিনি। এমার্জেন্সিতে নিয়ে যাওয়া হলে তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করা হয়। এরপরই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বচসা বেধে যায় রোগীর আত্মীয়দের। ফুলবাগান থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের হয়েছে।
শহরের নামিদামি বেসরকারি হাসপাতালের বিপন্ন পরিষেবার নজির বারবার উঠে আসে সংবাদপত্রের শিরোনামে। তবে সোমবারের এই ঘটনা ফের একবার প্রশ্নের মুখে দাঁড় করাল চিকিত্সা পরিষেবা ঠিক কোন জায়গায় দাঁড়িয়ে?