‘বিচ্যুত সোমনাথকে বহিষ্কার করার সিদ্ধান্ত সঠিক’, বলেছিলেন কারাত
এমনটাই কি হওয়ার কথা ছিল? হয়ত না! যেটা হল, সেটা কাঙ্খিত নয়, বলছেন অনেকেই। সাধারণত মৃত্যু পথযাত্রীর শেষ ইচ্ছা পূর্ণ করা হয়, সেখানে চেয়েও লাল পতাকাটা পেলেন না বর্ষীয়ান কমিউনিস্ট নেতা সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়। বলা ভাল, পরিস্থিতি সোমনাথের মরদেহর উপর লাল পতকাকে শায়িত হতে দিল না।
নিজস্ব প্রতিবেদন: এমনটাই কি হওয়ার কথা ছিল? হয়ত না! যেটা হল, সেটা কাঙ্খিত নয়, বলছেন অনেকেই। সাধারণত মৃত্যু পথযাত্রীর শেষ ইচ্ছা পূর্ণ করা হয়, সেখানে চেয়েও লাল পতাকাটা পেলেন না বর্ষীয়ান কমিউনিস্ট নেতা সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়। বলা ভাল, পরিস্থিতি সোমনাথের মরদেহর উপর লাল পতকাকে শায়িত হতে দিল না।
এদিন, ‘কমরেড’কে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে গিয়ে সোমনাথ পুত্র প্রতাপ চট্টোপাধ্যায়ের তিরস্কারের মুখে পড়তে হল বিমান বসুকে। প্রতাপ কড়া বক্তব্যে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন কারাতের বিরুদ্ধেও।
অভিমান-যন্ত্রণার রেশ, সিপিএম-এর পতাকা ফেরালেন সোমনাথ জায়া
সিপিএম-এর তত্কালীন সম্পাদক প্রকাশ কারাত-কে আজও কাঠগরায় দাড় করালেন প্রতাপ। কট্টরপন্থী কারাত উদারবাদী সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়ের বহিষ্কারের ঘটনায় একাধিকবার জানিয়েছেন, “প্রাক্তন স্পিকারের (সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়) ঘটনা বিচ্যুতির একটা উদাহরণ এবং একই সঙ্গে তাঁর বিরুদ্ধে দল যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে সেটাও দলীয় শৃঙ্খলার একটি অংশ”। এমনও শোনা যায়, প্রকাশ কারাত না কি কখনই চাননি সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়কে দলে ফিরিয়ে আনা হোক। দলঅন্ত প্রাণ বাবার প্রতি এমন ‘অসম্মান’কে আজও ভুলতে পারেননি আইনজীবী পুত্র।
ফারাক ৮ বছরের, গুরুর পাশেই ঠাঁই হল শিষ্যের!
রাজা বসন্ত রায় রোডের বাড়িতে তখন শেষবারের জন্য নিয়ে আসা হয়েছে সোমানাথবাবুকে। তাঁর লাইব্রেরির সারি সারি বইয়ের মাঝে ‘কাচের কফিনে’ কমিউনিস্ট নেতা তখন চিরঘুমে। ফুলের মালা হাতে তখন সেখানে দাঁড়িয়ে সীতারাম ইয়েচুরি, বিমান বসু, রবীন দেব, শতরূপ ঘোষ। তাঁদের সঙ্গে ছিল সোমনাথবাবুর চিরকালের সঙ্গী লাল পতাকাও। তবে সেই পতাকা আর দেওয়া হল না। সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়ের স্ত্রী জানিয়ে দিলেন, সিপিএম থেকে বহিষ্কৃত এই ১০ বারের সাংসদের মরদেহের উপর পার্টির পতাকা গ্রহন করা হবে না। তাই, শেষ পর্যন্ত কেবল মোহনবাগান পতাকাই একমাত্র স্থান পেল সোমনাথের মরদেহে। এখন প্রশ্ন, জাতীয় ফুটবল ক্লাবের সম্মান পেলেও কেন লাল পতাকা সঙ্গী হল না সোমনাথের?
পরিবারের অনিচ্ছা না সিপিআই(এম) নেতৃত্বের উদাসীনতা? কোনটা আসল কারণ? উত্তর- দুটোই। সোমনাথবাবুর পরিবারের অনিচ্ছার কারণের পিছনে যেমন রয়েছে ‘পাহাড় প্রমাণ অভিমান’, ঠিক তেমনই অন্যদিকে রয়েছে পার্টির ‘শৃঙ্খল’।
এক দশক আগের কথা। সিপিএম তখন কেন্দ্রের ইউপিএ (এক) সরকারের সবথেকে বড় শরিক। সোমনাথবাবু তখন লোকসভার স্পিকার, আর সিপিএম-এর সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ কারাত। দিল্লি তখন মার্কিনীদের সঙ্গে মোনমোহন সরকারের পরমানু চুক্তি নিয়ে সরগরম। পলিটবুরো সিদ্ধান্ত নিল, সরকার ওয়ান-টু-থ্রি চুক্তি নিয়ে অগ্রসর হলে ইউপিএ (এক) থেকে সমর্থন তুলে সরকার ফেলে দেওয়া হবে। পরমানু চুক্তির বিপক্ষে ভোটদানের হুইপও জারি করল সিপিএম। সব সাংসদই দলের সিদ্ধান্তে অবিচল থাকলেও সাংবিধানিক পদে থাকা সোমনাথবাবু দলের সিদ্ধান্ত মানতে অস্বীকার করেন। স্পিকার পদ কোনও দলের নয়, এটা একটি সাংবিধানিক পদ। এই কট্টর যুক্তিতেই নিজের অবস্থানে অনড় ছিলেন তিনি। এবং তিনি শেষ পর্যন্ত ভোট দেননি। পাল্টা ‘ব্যক্তি নয় দল বড়, দলের সিদ্ধান্তই শেষ সিদ্ধান্ত’, এই যুক্তিতে অনড় ছিলেন কারাত এবং কেরল শিবির। আলোচনা এমন জায়গায় পৌঁছায়, যে সংখ্যাগরিষ্ঠের মতামতের ভিত্তিতে দল থেকে বহিষ্কার করা হয় সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়কে। ২০০৮ সালের সেই ঘটনার রেশই এখনও চলছে। যা শেষ হল না সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়ের জীবনের শেষ দিন পর্যন্তও।
(সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়ের দেহ দানের অঙ্গীকার পত্র)
পরবর্তী সময়ে অনেকবারই সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়কে দলে ফিরিয়ে আনার দাবি ওঠে দলের অন্দরেই। তবে সেটা শেষ পর্যন্ত হয়নি। ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী নৃপেন চক্রবর্তীর মতো সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়কেও পার্টির সদস্যপদ ফিরিয়ে দিয়ে জীবনসায়াহ্নে সম্মান প্রদর্শনের পক্ষে ছিলেন গৌতম দেব, সুজন চক্রবর্তীর মতো নেতারা। তবে প্রাক্তন স্পিকারের মতামত না নিয়ে সেটা তাঁরা করতে পারেননি।
পরিবারের আপত্তিতে সোমনাথের দেহ যাচ্ছে না আলিমুদ্দিনে
যদিও, অভিমানী সাংসদও দলের কাছে পার্টির সদস্যপদের জন্য আর কোনও দিন কোনও আবেদনও করেননি। দীর্ঘ একদশক পরেও আজ তাঁর প্রয়ানের দিনে সেই বিতর্কটাই আবার সবার মুখে মুখে। আর সবার প্রশ্ন, কারাত কি আজও সেই একই অবস্থানে ?