পরীক্ষার নামে প্রহসন, শুধু টেট নয় রাজ্য সরকার ব্যর্থ মাধ্যমিক, আইটিআইয়ের পরীক্ষাতেও

রবিবারের টেট পরীক্ষা বাতিল। চব্বিশ ঘণ্টায় প্রশ্নপত্র ফাঁসের খবরের জের। পরীক্ষার দিন পিছিয়ে করে দেওয়া হল, ৪ অক্টোবর। কিন্তু বস্তাভর্তি প্রশ্নপত্র গেল কোথায়? এর এখনও কোনও সদুত্তর নেই। ডাক বিভাগকে কাঠগড়ায় তুলে দায় সেরেছে রাজ্য। তারা নিজে কোনও দায় নিতে নারাজ। কিন্তু সত্যিই কি এভাবে দায় ঝেড়ে ফেলতে পারে রাজ্যের শিক্ষা দফতর?    

Updated By: Aug 28, 2015, 08:30 PM IST
পরীক্ষার নামে প্রহসন, শুধু টেট নয় রাজ্য সরকার ব্যর্থ মাধ্যমিক, আইটিআইয়ের পরীক্ষাতেও

ব্যুরো: রবিবারের টেট পরীক্ষা বাতিল। চব্বিশ ঘণ্টায় প্রশ্নপত্র ফাঁসের খবরের জের। পরীক্ষার দিন পিছিয়ে করে দেওয়া হল, ৪ অক্টোবর। কিন্তু বস্তাভর্তি প্রশ্নপত্র গেল কোথায়? এর এখনও কোনও সদুত্তর নেই। ডাক বিভাগকে কাঠগড়ায় তুলে দায় সেরেছে রাজ্য। তারা নিজে কোনও দায় নিতে নারাজ। কিন্তু সত্যিই কি এভাবে দায় ঝেড়ে ফেলতে পারে রাজ্যের শিক্ষা দফতর?    

আমরাই প্রথম দেখিয়েছিলাম। টেটের প্রশ্নপত্র মাঝপথে লোপাট। দেখিয়েছিলাম সেই বাস, যাতে যাচ্ছিল প্রশ্নপত্রগুলি। আশঙ্কা সত্যি হল। আরও একবার দুর্ভোগ বাড়িয়ে, বাতিল হল টেট। লক্ষ লক্ষ পরীক্ষার্থী। ফের দুর্ভোগের শিকার। কে নেবে এর দায়? ডাক বিভাগের ওপর দোষ চাপিয়ে হাত ঝেড়ে ফেলতে ব্যস্ত শিক্ষামন্ত্রী। কিন্তু প্রশ্ন এড়িয়ে যেতে পারেন না তিনিও।

প্রশ্ন ১
বাসের কাচ প্রথম থেকে ভাঙাই ছিল, এমন নয় তো?
বাসটি প্রথম আসার পর কেউ কি তা লক্ষ্য করেছিল?

প্রশ্ন ২
বাসের নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিল রাজ্য পুলিস। বাসের ভিতরে ডাক বিভাগের কর্মীরা ছাড়াও ছিলেন দু জন পুলিসকর্মী।
তাঁরা কী করছিলেন?
বাইট --অরুন্ধতি ঘোষ,মুখ্য পোষ্ট মাষ্টার জেনারেল

প্রশ্ন ৩
এত বড় কাচ পুরো ভেঙে গেল, কেউ টের পেলেন না?
যদি মাঝরাস্তায় কাচ ভেঙে থাকে, কোনও শব্দ হল না?
পুলিস তখন কী করছিল?

প্রশ্ন ৪
এক-আধটা প্রশ্নপত্র নয়, গোটা একটা বস্তা হাপিশ হয়ে গেল।অথচ কেউ টের পেলেন না। এমনটা কি সত্যিই হওয়া সম্ভব?

প্রশ্ন ৫
বেসরকারি লাক্সারি বাসে পাঠানো হচ্ছিল প্রশ্নপত্র।
সরকারের এর সঙ্গে কোনও যোগ নেই। চালক-কর্মীরা দায়বদ্ধ নন। সব দেখেও কেন ওই বাসকে সবুজ সঙ্কেত দিল প্রাথমিক ও মধ্যশিক্ষা পর্ষদ?

কাচ ভেঙে হয়ত প্রশ্নভর্তি বস্তা মাঝপথে পড়ে গেছে। কিংবা কেউ তা মাঝপথে লোপাট করেছে। সবাই এটাই ভাবছে। কিন্তু উঁকি দিচ্ছে আরও এক ভয়ঙ্কর আশঙ্কা।

ষড়যন্ত্রের তত্ত্ব

গোড়ায়ই গলদ নেই তো? খাতায়-কলমে একশো চুয়ান্ন বস্তা প্রশ্নপত্র দেখিয়ে, আসলে বাসে একশো তিপ্পান্ন বস্তা তোলা হয়নি তো?

তবে কি ভিতরের কারোর ষড়যন্ত্রেই প্রশ্ন লোপাট?পরীক্ষা না প্রহসন? কী চলছে রাজ্যে? গত কয়েক বছরে একাধিক পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস। একাধিকবার বাতিল পরীক্ষা। বিভ্রান্তির মুখে পড়তে হচ্ছে পরীক্ষার্থীদের। কিন্তু কেন বারবার পরীক্ষা নিয়ে এই ছিনিমিনি খেলা? যেখানে কয়েক লক্ষ ছেলেমেয়ের ভবিষ্যত্‍ জড়িয়ে!
টোকাটুকি

মাধ্যমিক, ২০১৫

মাধ্যমিক পরীক্ষা। গণটোকাটুকির এই ছবি, এরাজ্যে শিক্ষাক্ষেত্রে নতুন আমদানি।
তবে শুধু স্কুল-কলেজের গণ্ডিতেই তা আর সীমাবদ্ধ নেই।
ছড়াচ্ছে বিশৃঙ্খলা।

প্রাথমিক টেট পরীক্ষা, ২০১২

পরীক্ষার দিন চূড়ান্ত অব্যবস্থা। পরীক্ষাকেন্দ্র পর্যন্তই পৌছতে পারেননি বহু পরীক্ষার্থী।
তারপরই প্রকাশ্যে দুর্নীতি। নিয়োগ ঘিরে উঠে আসে স্বজণপোষণের অভিযোগ।  

আইটিআই প্রবেশিকা পরীক্ষা, ২০১৫

আঠাশে জুন ছিল পরীক্ষার দিন। কিন্তু পরীক্ষার আগের দিনই ফাঁস হয়ে যায় প্রশ্নপত্র। পরীক্ষাকেন্দ্রে গিয়ে, পরীক্ষার্থীরা জানতে পারেন, হবে না পরীক্ষা।  
তদন্তে উঠে আসে একের পর এক, তৃণমূল নেতা-মন্ত্রীর নাম।

প্রাথমিক টেট পরীক্ষা, ২০১৫

পরীক্ষার দু-দিন আগে সাতাশে অগাস্ট রাত্রে ধরা পড়ে এক বস্তা প্রশ্ন উধাও।  

কেন বারবার, পরীক্ষা ঘিরে এই গাফিলতি? পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে নেওয়ার দায়িত্ব যাদের, তাঁরাই গোটা পরীক্ষা ব্যবস্থাকে চরম উপহাসের জায়গায় নিয়ে যাচ্ছেন।
এ রাজ্যেও পয়সা দিলেই পাওয়া যায় প্রশ্ন। সেই তত্ত্ব ক্রমশ জোরালো হচ্ছে। আর যাঁরা জড়িত এই ছিনিমিনি খেলায়, অধিকাংশ ক্ষেত্রে তাঁরা শাসক দলের খাস লোক।
তাই শাস্তির খাড়া তাঁদের ক্ষেত্রে ভোতা। প্রশ্ন উঠছে, পরীক্ষার নামে এ প্রহসনের মানে কী?

.