কেন অবৈধ সিঙ্গুর আইন?

সিঙ্গুর জমি পুনর্বাসন এবং উন্নয়ন আইনআইন অবৈধ ও অসাংবিধানিক। শুক্রবার এই ঐতিহাসিক রায় দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি পিনাকি চন্দ্র ঘোষ ও বিচারপতি মৃণালকান্তি চৌধুরীর ডিভিশন বেঞ্চ। ঠিক কোন কোন জায়গা থেকে সিঙ্গুর জমি পুনর্বাসন এবং উন্নয়ন আইনকে খারিজ করে দিল কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ? সু্প্রিম কোর্টে কি ধাক্কা সামলাতে পারবে সরকার?

Updated By: Jun 22, 2012, 11:21 PM IST

সিঙ্গুর জমি পুনর্বাসন এবং উন্নয়ন আইনআইন অবৈধ ও অসাংবিধানিক। শুক্রবার এই ঐতিহাসিক রায় দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি পিনাকি চন্দ্র ঘোষ ও বিচারপতি মৃণালকান্তি চৌধুরীর ডিভিশন বেঞ্চ। ঠিক কোন কোন জায়গা থেকে সিঙ্গুর জমি পুনর্বাসন এবং উন্নয়ন আইনকে খারিজ করে দিল কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ? সু্প্রিম কোর্টে কি ধাক্কা সামলাতে পারবে সরকার? আইনজ্ঞরা বলছেন, শীর্ষ আদালতে গেলেও, সেখানেও সরকারের পথ মসৃণ নয়। হাইকোর্টের সিঙ্গল বেঞ্চ সিঙ্গুর জমি পুনর্বাসন এবং উন্নয়ন আইনের পক্ষে শিল্পমোহর দিয়েছিল। কিন্তু ডিভিশন বেঞ্চ উল্টো পথে হেঁটে রাজ্য সরকারের এই আইনকে অবৈধ এবং অসাংবিধানিক ঘোষণা করল। কেন এই আইন অবৈধ। হাইকোর্ট জানিয়েছে--    
 
১) দেশের সংবিধান অনুযায়ী জমি সংক্রান্ত আইন প্রণয়ন যৌথ তালিকার এক্তিয়ারভূক্ত। রাজ্য এবং কেন্দ্রের আইনের বিরোধ ঘটলে, কেন্দ্রের আইনই সেক্ষেত্রে বলবত্ হয়। সিঙ্গুর আইনের সঙ্গে আঠারশ চুরানব্বই সালের জমি অধিগ্রহণ  আইনের স্ববিরোধ রয়েছে। ফলে এ ক্ষেত্রেও কেন্দ্রের আইনই বলবত্ হবে।  
 
২) সংবিধান অনুযায়ী, জমি সংক্রান্ত কোনও আইনে রাষ্ট্রপতির অনুমোদন লাগে। কিন্তু সিঙ্গুর জমি পুনর্বাসন এবং উন্নয়ন আইনের ক্ষেত্রে তা নেওয়া হয়নি। তাই এই আইন অবৈধ। 
 
৩) আঠারো শ চুরানব্বই সালের আইন অনুযায়ী সিঙ্গুরের জমি অধিগ্রহণ শিল্পস্থাপনের জন্য জমি নেওয়া হয়েছিল। সিঙ্গুর আইন অনুযায়ী, সেই জমি কৃষকদের একাংশের মধ্যে ফিরিয়ে দেওয়াকে জনস্বার্থ হিসেবে দেখানো হয়। ডিভিশন বেঞ্চের রায়ে এভাবে জমি ফিরিয়ে দেওয়া জনস্বার্থে হতে পারে না।
 
৪) সিঙ্গল বেঞ্চ সিঙ্গুর আইনকে বৈধ ঘোষণা করেছিল। যদিও সেই আইনে ক্ষতিপূরণের উল্লেখ না থাকায় আঠারো শ চুরানব্বই সালের আইন মোতাবেক টাটাদের ক্ষতিপূরণ দিতে রাজ্যকে নির্দেশ দেয় কলকাতা হাইকোর্টের সিঙ্গল বেঞ্চ। ডিভিশন বেঞ্চের রায়ে সিঙ্গল বেঞ্চের এমন নির্দেশ দেওয়ার এক্তিয়ার নেই। 
 
 
মূলত এই চারটি বিষয়ে সিঙ্গুর জমি পুনর্বাসন আইন নিয়ে ধাক্কা খেল রাজ্য। ডিভিশন বেঞ্চের রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার পক্ষ। তবে সেখানেও সরকারের পথ মসৃণ নয় বলেই মনে করছেন আইনজ্ঞরা।
 
১) আঠারশ চুরানব্বই সালের আইন অনুযায়ী সিঙ্গুরের জমি অধিগ্রহণ করে রাজ্য সরকার। সেই আইনে অনিচ্ছুক কৃষকদের কোনও উল্লেখ নেই।
 
২) জনস্বার্থে নেওয়া জমি, ফেরত দেওয়া যায় না।  
 
৩) টাটারা জমি ব্যবহার না করে ফেলে রেখেছে, সিঙ্গুর আইন তৈরির এই মূল ভিত্তি, তা আদৌ সত্য নয়।
 
৪) টাটাদের সঙ্গে রাজ্য সরকারের চুক্তি অনুযায়ী, লিজের সময়সীমা পর্যন্ত এই জমি থাকবে টাটাদের হাতে। টাটাদেরকে দেওয়া জমির লিজের মেয়াদ নিরানব্বই বছর।
 
৫) সংবিধানের একত্রিশ নম্বর ধারা অনুযায়ী, কৃষি জমি অধিগ্রহণ করা যায়।
 
সিঙ্গুর আইনের ভবিষ্যত আপাতত সুপ্রিম কোর্টে। আইনজ্ঞরা মনে করছেন, সুপ্রিম কোর্টে অনেকটা ব্যাকফুটে থেকে শুরু করতে হবে রাজ্য সরকারকে।
 

.