আতঙ্কের উত্তরপ্রদেশ: দলিত হয়েও মন্দিরে ঢুকতে চাওয়ার 'অপরাধে' বৃদ্ধকে জ্যান্ত পুড়িয়ে মারল উচ্চবর্ণের যুবক
সোমবার রাতে গোরুর মাংস খাওয়ার গুজব ছড়িয়ে ৫০ বছরের প্রৌঢ় মহম্মদ ইকলাখকে পিটিয়ে খুন করেছিল উন্মত্ত কিছু ধর্মান্ধ। উত্তরপ্রদেশের বাহিরির সেই নারকীয় ঘটনার ক্ষত এখনও দগদগে। বুধবার জ্যান্ত পুড়িয়ে হত্যা করা হয় ৯০ বছরের এক বৃদ্ধকে। তাঁর 'অপরাধ' দলিত হয়েও মন্দিরে ঢুকতে চেয়েছিলেন তিনি। উচ্চবর্ণের স্বঘোষিত নীতিপুলিসরা এই 'অনাচার' মেনে নেয়নি। তাই 'শাস্তি' দিতে দিনের আলোয় প্রকাশ্যে গায়ে কেরসিন ঢেলে পুড়িয়েই খুন করা হল তাঁকে। এবং হ্যাঁ, এক্ষেত্রেও ঘটনাস্থল সেই উত্তরপ্রদেশই।
ওয়েব ডেস্ক: সোমবার রাতে গোরুর মাংস খাওয়ার গুজব ছড়িয়ে ৫০ বছরের প্রৌঢ় মহম্মদ ইকলাখকে পিটিয়ে খুন করেছিল উন্মত্ত কিছু ধর্মান্ধ। উত্তরপ্রদেশের বাহিরির সেই নারকীয় ঘটনার ক্ষত এখনও দগদগে। বুধবার জ্যান্ত পুড়িয়ে হত্যা করা হয় ৯০ বছরের এক বৃদ্ধকে। তাঁর 'অপরাধ' দলিত হয়েও মন্দিরে ঢুকতে চেয়েছিলেন তিনি। উচ্চবর্ণের স্বঘোষিত নীতিপুলিসরা এই 'অনাচার' মেনে নেয়নি। তাই 'শাস্তি' দিতে দিনের আলোয় প্রকাশ্যে গায়ে কেরসিন ঢেলে পুড়িয়েই খুন করা হল তাঁকে। এবং হ্যাঁ, এক্ষেত্রেও ঘটনাস্থল সেই উত্তরপ্রদেশই।
চিম্মা নামের ওই বৃদ্ধ হিন্দুরীতি অনুযায়ী পূর্বপুরুষদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে স্ত্রী, পুত্র ও ভাইয়ের সঙ্গে গয়ায় এসেছিলেন। বুধবার সকালে ময়দানি বাবা মন্দিরে সস্ত্রীক পুজো দিতে যান তিনি। মন্দিরের সিঁড়ি দিয়ে ওঠার সময়েই সঞ্জয় তিওয়ারি নামের উচ্চবর্ণের এক যুবক তাঁদের রাস্তা আটকে দাঁড়ায়। তাঁদের সিঁড়ি থেকেই ফিরে যেতে বলে। চিম্মা প্রাথমিকভাবে সঞ্জয়ের তিওয়ারির কথায় কান দেননি। এরপরেই খেপে ওঠে ওই যুবক। ধারালো অস্ত্র দিয়ে চিম্মার উপর ঝাঁপিয়ে পরে তাঁকে কোপাতে শুরু করে সে। ঘটনার আকস্মিকতায় আতঙ্কিত হয়ে ওঠেন চিম্মার স্ত্রী। কান্নায় ভেঙে পড়ে ওই বৃদ্ধা চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে আশেপাশের সবার কাছে সাহায্যের আবেদন জানাতে থাকেন। কিন্তু, একজনও এগিয়ে আসেনি ওই বৃদ্ধ দম্পতিকে সাহায্য করতে।
কিন্তু নৃশংসতার তখনও বাকি ছিল অনেকটাই। এরপরে সবার সামনেই তিওয়ারি চিম্মার গায়ে কেরসিন ঢেলে তাঁর গায়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। দাউদাউ করে জ্বলতে থাকেন বৃদ্ধ। চোখের সামনে এই নারকীয় ঘটনা দেখেও চুপ করে ছিলেন মন্দির দর্শনে আসা পুণ্যার্থীরা। তবে এরপর রাস্তার কিছু যুবক এগিয়ে আসেন। তাঁদের তৎপরতাতেই ধরা পড়ে তিওয়ারি। কিন্তু ততক্ষণে মৃত্যু হয়েছে চিম্মার।
কিছুক্ষণ পর ঘটনাস্থালে পৌঁছয় পুলিস। গ্রেফতার করা হয় তিওয়ারিকে। পুলিসের দাবি দলিত হওয়ার জন্যই চিম্মা ও তাঁর পরিবারকে মন্দিরে ঢুকতে বাধা দিয়েছিল সঞ্জয় তিওয়ারি।
আতঙ্কিত সন্ত্রস্ত চিম্মার পরিবার এই মুহূর্তে পুলিসি নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ তুলেছেন। তাঁদের অভিযোগ তিওয়ারিকে মদ্যপ দাবি করে তার অপরাধ লঘু করার চেষ্টা চালাচ্ছে পুলিস। ''মন্দির কি শুধু উচ্চবর্ণের জন্য? আমাদের কি সেখানে প্রবেশের অধিকার নেই?'' প্রশ্ন করেছেন চিম্মার বৃদ্ধা স্ত্রী।
উত্তরপ্রদেশে অবশ্য দলিতদের উপর উচ্চবর্ণের অত্যাচারের ঘটনা নতুন নয়। জুন মাসে এক দলিত কিশোরীকে বেধরক মারধর করেন উচ্চবর্ণের এক মহিলা। ওই কিশোরীর 'দোষ'? তার ছায়া পড়েছিল ওই মহিলার স্বামীর উপর।
মার্চ মাসে ১৭ বছরের এক দলিত কিশোরীর গায়ে আগুন ধরিয়ে দিয়েছেন উচ্চবর্ণের কিছু ব্যক্তি। মেয়েটির স্বপ্ন ছিল উচ্চশিক্ষার। আর সেটাই সহ্য করতে পারেনি উচ্চবর্ণীয়রা। তাই তাকে আগুনে পুড়িয়ে মারার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল তারা।
উত্তরপ্রদেশে বিধানসভা নির্বাচন আসন্ন। তার আগেই হয়ে যাবে বিহারের নির্বাচনও। এই সময় নিজেদের ভোটব্যাঙ্ক মজবুত করে তৎপর সব রাজনৈতিক দলই। এই ধরণের ঘটনার পুনরাবৃত্তির পিছনে কি আছে কোনও রাজনৈতিক উদ্দেশ্য? উঠছে সেই প্রশ্নও।