Durga Puja 2022: জমিদার নেই, দুঃস্থ গ্রামবাসীরাই চাঁদা তুলে বাঁচিয়ে রেখেছেন বাহিনবাড়ির পুজো!
আশে পাশের গ্রামের জমিদারদের আমন্ত্রণ থাকত পুজোর দিনগুলোয়। তবে ব্রাত্য থাকতেন শুধুমাত্র গ্রামবাসীরা। এখন অবশ্য সেই সবই অতীত। রায়গঞ্জের বাহিনের জমিদার বাড়ির পুজো আজ সর্বজনীন।
জি ২৪ ঘণ্টা ডিজিট্যাল ব্যুরো: শরতের আকাশে পেজা তুলোর মতো মেঘ । নাগর নদীর পার থেকে ভেসে আসা শিউলি ফুলের ঘ্রাণ জানান দিত মা আসছেন। আর মাত্র কয়েক টা দিন। নাগর নদীর তীরে এসে ভিড়ত বজরারা। একেবারে নদীর ধার ঘেঁষেই ছিল বাহিনের প্রাসাদতুল্য জমিদার বাড়ি। পুজোর কটা দিন দুর-দুরান্ত থেকে এসে ভিড় জমাত আত্মীয় পরিজনরা। জমিদার বাড়ি জুড়ে তখন সাজো সাজো রব। আশে পাশের গ্রামের জমিদারদের পর্যন্ত আমন্ত্রণ থাকত পুজোর দিনগুলোয়। তবে ব্রাত্য থাকতেন শুধুমাত্র গ্রামবাসীরা। এখন অবশ্য সেই সবই অতীত। রায়গঞ্জের বাহিনের জমিদার বাড়ির পুজো আজ সর্বজনীন।
আরও পড়ুন: Durga Puja 2022 : চাঁচল রাজবাড়ির পুজো ১৭ দিন, উৎসবের থিম? সম্প্রীতি!
কথিত আছে, সেইসময় অবিভক্ত বাংলাদেশের জমিদার ছিলেন রুদ্র প্রতাপ চৌধুরী। তার জমিদারি ছিল বাহিন, কুমারজল, মাকড়া, মধুপুর এবং লহুজগ্রাম লাগোয়া বর্তমান বিহারের বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে। উত্তর দিনাজপুরের জমিদারবাড়ির পুজো গুলির মধ্যে অন্যতম ছিল রায়গঞ্জ ব্লকের বাহিন জমিদারবাড়ির এই ঐতিহ্যবাহী দুর্গাপুজো। সেইসম়য় পুজোর চারটে দিন জমিদার বাড়িতে বসত যাত্রাপালার আসর, থিয়েটার, সার্কাস আরও কত কি! আত্মীয়-পরিজন থেকে শুরু করে কচিকাঁচাদের ভিড়ে রীতিমত গমগম করত জমিদার বাড়ি। দশমীর দিন এক বিশেষ মেলার আয়োজনও করা হত পুজোর দিনগুলিতে। আলোর রোশনাইয়ে সেজে উঠত জমিদারের প্রাসাদোপম অট্টালিকা। বর্তমানে ছবিটা অবশ্য একেবারেই উল্টো। জমিদারের বংশধরেরা এখন আর কেউই থাকেন সেই বাড়িতে। অনেক বছর আগেই বাড়ি খালি করে ভিনরাজ্যে পাড়ি জমিয়েছেন বাড়ির সদ্যসেরা। উত্তরাধিকাররা জমিদার বাড়ি দান করে গেছেন ভারত সেবাশ্রম সংঘকে।
আরও পড়ুন: Durga Puja 2022 : কনকদু্র্গার ভোগে হাঁসের ডিম, নবমীতে মোষের মাংস!
ছেড়ে যাওয়া জমিদার বাড়ি এখন ভগ্নপ্রায় জরাজীর্ণ অবস্থায় থেকে গেছে অতীতের স্মৃতি আঁকড়ে। এতকিছুর পরেও জমিদার বাড়ির ঐতিহ্যবাহী দুর্গাপুজোয় আঁচ লাগতে দেয়নি দুস্থ গ্রামবাসীরা। নিজেদের মতো করে চাঁদা তুলে বছরের পর বছর পুজোর ঐতিহ্যকে বহাল রেখেছেন তাঁরা। গত দুবছর করোনা আবহে নমো নমো করে সাড়তে হয়েছে রাজবাড়ির পুজো। তবে এবছর একেবারে সাড়ম্বড়ে পুজো সাড়তে চাইছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। ঐতিহ্যের ধারাকে বজায় রেখে আজও দশমীতে মেলার আয়োজন করছেন আশপাশের গ্রামের মানুষজন। প্রতিবছর সেই বিশেষ মেলারও আয়োজন করেণ তাঁরা। পুজো এবং দশমীর মেলা আঁকড়ে ধরেই বাহিন জমিদারবাড়ির পুজোর ঐতিহ্য বজায় রাখার আপ্রাণ চেষ্টায় গ্রামবাসীরা।