মঙ্গলে পা দিল ভারত। মঙ্গলের কক্ষপথে প্রবেশ মঙ্গলযানের, ইতিহাস ইসরোর
মঙ্গলের কক্ষপথে প্রবেশ করল মঙ্গলযান। একবছরেরও কম সময়ে লালগ্রহের কক্ষপথ প্রবেশ করল ভারতের মঙ্গলযান। প্রথমবারের চেষ্টাতেই মঙ্গলের মাটিতে পা দিয়ে রেকর্ড গড়ল ইসরোর মঙ্গল মিশন। দেশবাসীকে এই ঐতিহাসিক মুহূর্তে শুভেচ্ছা জানালেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
ওয়েব ডেস্ক: ইতিহাস সৃষ্টি করে মঙ্গলের কক্ষপথে ঢুকে পড়ল ভারতীয় মঙ্গলযান। বেঙ্গালুরুতে ইসরোর কেন্দ্রে ইতিহাসের সাক্ষী রইলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সকাল থেকে রুদ্ধশ্বাস অপেক্ষা। সকাল আটটায় ল্যাম বন্ধ করে মিশনের সাফল্য ঘোষণা করলেন ইসরোর চেয়ারম্যান কে রাধাকৃষ্ণন। ল্যাম অর্থাত্ "লিক্যুইড অ্যাপোজি মোটর' চালিয়ে যানের গতি নিয়ন্ত্রণ করে মঙ্গলের কক্ষপথে ঢুকে পড়ে মঙ্গল যান।
প্রথম অভিযানেই সফল। বিশ্বের অন্য কোনও দেশের ঝুলিতে অতীতে আসেনি এই সাফল্য। আর লালগ্রহের কক্ষে সঠিক প্রতিস্থাপনের পর আজ থেকেই ছবি পাঠাতে শুরু করবে মঙ্গলযান। ইতিহাস ছুঁল ইসরো। মহাকাশ বিজ্ঞানে এলিট ক্লাসে ভারতকে পৌছে দিল ইসরো। আর এই গোটা ঐতিহাসিক মুহূর্তের সাক্ষী রইলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। বললেন, হলিউডের ছবির থেকেও কম বাজেটে মঙ্গলযান পাঠাতে পেরেছে ইসরো।
এ পর্যন্ত ৫১টি অভিযান হয়েছে মঙ্গলে। যার মধ্যে সফল হয়েছে মাত্র ২১টি। আমেরিকা, রাশিয়া, ইউরোপিয়ান মহাকাশ গবেষণা সংস্থা এখনও পর্যন্ত মঙ্গলে সফল অভিযান করতে পেরেছে। তবে প্রথমবারে কেউই সফল হয়নি। পারল শুধু ভারত।
সকাল থেকে সব কিছুই ঠিকঠাক চবতে থাকে। কাজ করতে শুরু করে মঙ্গলযানের সবকটি ইঞ্জিন । পৃথিবীর সঙ্গে ফের যোগাযোগ শুরু। ঐতিহাসিক মুহূর্তের সাক্ষী হতে ইসরোয় যান প্রধানমন্ত্রী।
গত পাঁচই নভেম্বর শ্রীহরিকোটা থেকে যাত্রা শুরু হয় মঙ্গলযানের। প্রথম এশিয় প্রতিনিধি হিসেবে মঙ্গলের কক্ষে পৌছল ইসরোর মঙ্গলযান। প্রথম মঙ্গল অভিযানে আজ পর্যন্ত কোনও দেশই সাফল্য পায়নি।
প্রায় ৩০০ দিন ঘুমিয়ে থাকার পর সোমবার পরীক্ষামূলকভাবে বিজ্ঞানীরা চালু করেন ।
অ্যাপোজি মোটর বা ল্যাম। এখন পর্যন্ত পূর্বনির্ধারিত গণনা মেনেই চলছে মঙ্গলযান। যানের গতি কমানোর জন্য আজ, বুধবার সকালে চালু করা হয় ল্যাম। কারণ যানের গতি বেশি থাকলে মঙ্গলের মাধ্যাকর্ষণের বাইরে চলে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। গতি কমিয়ে ঠিক ভাবে মঙ্গলযানকে কক্ষে স্থাপন করা হয়।
ইসরোর চ্যালেঞ্জ কক্ষপথে স্থাপনের সময় মঙ্গলযানের গতিবেগ প্রতি সেকেন্ডে ২২ কিলোমিটার থেকে কমিয়ে ৪.৪ কিলোমিটার করা হয়।
মঙ্গলের উপবৃত্তাকার কক্ষপথের আওতায় তলে আসার পাঁচ মিনিট পর চালু করা হয় ল্যাম। ল্যাম ছাড়াও আটটি থ্রাস্টার চালু করা হয়।
ল্যাম চালু হওয়ার ঠিক আগে মঙ্গলযানের অভিমুখ শেষবারের জন্য বদল করা হয়। গতি কমতে থাকায় মঙ্গলের মাধ্যাকর্ষণের টানে লাল গ্রহের কক্ষে ঢুকে পড়ে মঙ্গলযান।
সকাল ৭.১৭মিনিট থেকে ২৪ সেকেন্ড পর্যন্ত চালু ছিল ল্যাম।
যতক্ষণ ল্যাম ও থ্রাস্টার চালু থাকবে, ততক্ষণ পৃথিবীর সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকবে মঙ্গলযানের। যানের গতি নির্ধারিত বেগে পৌছলে বন্ধ হয়ে যাবে ইঞ্জিন। সুবিধাজনক অবস্থানে পৌছনোর পর ফের মঙ্গলযানের সঙ্গে যোগাযোগ তৈরি হবে ইসরোর। প্রথম দিনেই মার্স কালার ক্যামেরা চালু করে ছবি পাঠাবে মঙ্গলযান।
২০১৩ সালের পাঁচই নভেম্বর। শ্রীহরিরকোটার সতীশ ধাওয়ান স্পেস সেন্টার থেকে পিএসএলভি সি টোয়েন্টি ফাইভে চেপে মঙ্গলের পথে রওনা দিয়েছিল ভারতের মঙ্গলযান। তার পর থেকে আশা আর আশঙ্কার দোলাচলে প্রতিটা মুহূর্ত কেটেছে ইসরোর বিজ্ঞানীদের। তবে সব কিছু প্রতিকুলতাকে ছাপিয়ে লালগ্রহের কক্ষে পৌছে গেল মঙ্গলযান। মহাকাশ গবেষণায় তৈরি হল নতুন ইতিহাস।