বিরোধীদের চাপে গণনা স্থগিত, শাসকের চাপে নতি স্বীকার, অবস্থান বদল, প্রশ্নের মুখে রাজ্য নির্বাচন কমিশনার
বিরোধীদের প্রবল চাপে প্রথমে পুরভোটের গণনা স্থগিত। পরে শাসকের চাপে নতিস্বীকার করে পুরোপুরি অবস্থান বদল। ফলে প্রশ্নের মুখে রাজ্য নির্বাচন কমিশনার। কিন্তু কঠোর সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা কি কমিশনের ছিল না? সংবিধান বলছে, ভোটে কমিশনই শেষ কথা। তাই সংবিধানে দেওয়া ক্ষমতা ব্যবহার করে কঠোর সিদ্ধান্ত নিতেই পারত কমিশন।
ব্যুরো: বিরোধীদের প্রবল চাপে প্রথমে পুরভোটের গণনা স্থগিত। পরে শাসকের চাপে নতিস্বীকার করে পুরোপুরি অবস্থান বদল। ফলে প্রশ্নের মুখে রাজ্য নির্বাচন কমিশনার। কিন্তু কঠোর সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা কি কমিশনের ছিল না? সংবিধান বলছে, ভোটে কমিশনই শেষ কথা। তাই সংবিধানে দেওয়া ক্ষমতা ব্যবহার করে কঠোর সিদ্ধান্ত নিতেই পারত কমিশন।
ভোটগণনা স্থগিত করা নিয়ে কমিশনের এক্তিয়ার সম্পর্কেই প্রশ্ন তুলেছেন শিক্ষামন্ত্রী। কী রয়েছে কমিশনের এক্তিয়ারে?
সংবিধানে পুরভোট পরিচালনায় রাজ্য নির্বাচন কমিশনকে চূড়ান্ত ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। ২৪৩ ZA ধারায় বলা হয়েছে, পুরভোটের পরিচালনায়, তদারকি, নির্দেশনা ও নিয়ন্ত্রণের সব ক্ষমতা রাজ্য নির্বাচন কমিশনের হাতে থাকবে
ফলে সাংবিধানিক ক্ষমতার বলেই নির্বাচন সংক্রান্ত যাবতীয় সিদ্ধান্ত নেওয়ার সর্বোচ্চ অধিকারী নির্বাচন কমিশন। অর্থাত্ রবিবার কমিশনের গণনা স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত এক্তিয়ার বহির্ভুত কাজ নয়। প্রশ্ন উঠছে এবার কী?
কোন কোন পরিস্থিতিতে নির্বাচন বাতিল হতে পারে। তাও বলা হয়েছে পশ্চিমবঙ্গ পুরভোট আইনে।
পুরভোট আইনের বাষট্টি নম্বর ধারায় বলা হয়েছে, ব্যালট বাক্স বা ইভিএম লুঠ বা ভাঙচুরের ঘটনা ঘটলে মিউনিসিপ্যাল রিটার্নিং অফিসারের রিপোর্টের ভিত্তিতে নির্বাচন বাতিল হতে পারে
ওই আইনেরই তেষট্টি নম্বর ধারায় বলা হয়েছে বুথ দখলের ঘটনা ঘটলে মিউনিসিপ্যাল রিটার্নিং অফিসারের রিপোর্টের ভিত্তিতে নির্বাচন বাতিল হতে পারে
শনিবার বিধাননগর পুরনিগমের একুশ নম্বর ওয়ার্ডে ইভিএম ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। একাধিক ওয়ার্ডের একাধিক বুথে বুথ দখল-ছাপ্পার অভিযোগ উঠেছে। সংবাদমাধ্যমে ধরা পড়েছে সেসব ছবিও। মিউনিসিপ্যাল রিটার্নিং অফিসারের রিপোর্টে এগুলির উল্লেখ থাকলেই ভোট বাতিল হওয়ার কথা। বিধাননগর পুরসভার ক্ষেত্রে মিউনিসিপ্যাল রিটার্নিং অফিসার হচ্ছেন বিধাননগরের SDO। কিন্তু, তাঁর রিপোর্টে যদি অস্বাভাবিক কিছুর উল্লেখ না থাকে তাহলেও কি কমিশনের কিছুই করার নেই? না একেবারেই নয়। একাধিক মামলার রায়ে সুপ্রিম কোর্ট বারবার জানিয়েছে,
সংবিধানের দুশো তেতাল্লিশের ZA ধারা হচ্ছে ক্ষমতার আধার।
সেই আধার থেকে ক্ষমতা সংগ্রহ করে, সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন পরিচালনার স্বার্থে কমিশন যে কোনও সিদ্ধান্ত নিতে পারে।
ভোটারদের আস্থা অর্জনের জন্য কমিশনকে যে কোনও পদক্ষেপ করার অধিকার সংবিধানে দেওয়া হয়েছে।
অথচ এতসব ক্ষমতা হাতে থাকা সত্ত্বেও কোনও কার্যকরী ভূমিকাই নিলেন না রাজ্য নির্বাচন কমিশনার। উল্টে শাসকের চাপের কাছে নতিস্বীকার করলেন তিনি। এর জেরে গণতন্ত্রের অন্যতম স্তম্ভ নির্বাচন কমিশনের ভূমিকাকে হেয় করার দায় কি তাঁর ওপরেও বর্তায় না? বিরোধীরা এই প্রশ্ন কিন্তু তুলছেনই।