নিয়মিত ঘুম কম হচ্ছে? জানেন এর জন্য আর কি কি সমস্যা হতে পারে?
জেনে নেয়া যাক কম ঘুমের জন্য শরীরে কী কী ধরণের ক্ষতি হতে পারে।
নিজস্ব প্রতিবেদন: আপনার কি ঠিক মতো ঘুম হয় না? রাত হলে সময় মতো বিছানায় যান ঠিকই কিন্তু ঘুম আসে না কিছুতেই! ঘুমের জন্য অপেক্ষা করতে করতে রাতের প্রায় অর্ধেকটাই পার হয়ে যায় বিছানায় এপাশ ওপাশ করতে করতে। এমন সমস্যায় যাঁরা আছেন, তাঁরা অনেকেই ঘুমানোর জন্য ঘুমের ওষুধের সাহায্য নিয়ে থাকেন। কিন্তু ঘুমের ওষুধের প্রতি অতিরিক্ত নির্ভরশীলতাও আমাদের শরীরের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। চলুন জেনে নেয়া যাক কম ঘুমের জন্য শরীরে কী কী ধরণের ক্ষতি হতে পারে।
১) শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা নষ্ট করে: ঘুম মূলত আমাদের শরীরের ক্ষয়ক্ষতি পূরণ ও শক্তি সঞ্চয়ের একটি পন্থা। যখন আমরা ঘুমোই, তখন আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার জন্য দায়ী ‘লিভিং অরগানিজম’ (Living organisms) কাজ করতে থাকে। কিন্তু আমরা না ঘুমালে এই ‘লিভিং অরগানিজম’গুলো কাজ করতে পারে না। ফলে ক্রমশ আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমতে থাকে।
২) ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ায়: দীর্ঘদিন রাতে না ঘুমানো বা কম ঘুমানোর ফলে শরীরে ইনসুলিন উৎপাদন ব্যহত হয়। যার ফলে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়তে থাকে।
৩) হার্টের সমস্যা বৃদ্ধি করে: আমরা যখন ঘুমাই তখন আমাদের হৃদপিণ্ড এবং রক্তনালী কিছুটা হলেও বিশ্রাম পায়। কিন্তু ঘুম না হলে বা কম হলে প্রতিনিয়ত কার্ডিওভ্যস্কুলার সমস্যা বাড়তে থাকে। এর ফলে হার্টের সমস্যা বাড়তে থাকে।
৪) উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা বৃদ্ধি করে: দিনে পর্যাপ্ত ঘুম না হলে বা কম হলে বাড়তে পারে উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা। চিকিত্সকদের মতে আমরা না ঘুমালে আমাদের শরীরের ‘লিভিং অরগানিজম’গুলো ঠিক মতো কাজ করতে পারে না। নষ্ট হতে পারে শরীরের হরমোনের ভারসাম্য। বাড়তে পারে উচ্চ রক্তচাপ, হাইপার টেনশনের মতো সমস্যা।
৫) হজমের সমস্যা বৃদ্ধি করে: প্রতিদিন পর্যাপ্ত ঘুম না হলে বাড়তে পারে হজমের সমস্যাও। আমরা না ঘুমালে আমাদের শরীরের পাচন ক্রিয়ায় সাহায্যকারী অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলি সঠিক ভাবে কাজ করতে পারে না। ফলে খাবার হজমে সহায়ক পাচক রসগুলি উপযুক্ত মাত্রায় নিঃসরণে বাধা পায়। তাই হজমের নানা সমস্যা শুরু হয়।
৬) মানসিক স্বাস্থ্য নষ্ট হয়: মস্তিষ্কে ওরেক্সিন নামের একটি নিউরোট্রান্সমিটার আছে যা মস্তিষ্ককে সচল রাখতে সহায়তা করে। প্রতিদিন পর্যাপ্ত ঘুম না হলে ওরেক্সিন উৎপাদনের গতি মন্থর হয়ে যায়। মস্তিষ্কের কর্ম ক্ষমতা কমতে থাকে। মস্তিষ্ক পর্যাপ্ত পরিমাণ বিশ্রাম না পেলে অতিরিক্ত বিষণ্ণতা, হ্যালুসিনেশনের, স্মৃতিভ্রংশের মতো একাধিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। দিনে দিনে নিজের বিচার বিশ্লেষণ করার ক্ষমতাও লোপ পেতে পারে।
সুতরাং, ঘুম আমাদের জন্য অত্যন্ত জরুরী একটি পন্থা। আমাদের দৈহিক প্রায় সকল কার্যকলাপই ঘুমের উপরে অনেকটাই নির্ভরশীল। তাই কোনও রকম অবহেলা না করে নিয়মিত প্রতিদিন অন্তত ৬-৭ ঘণ্টা ঘুমানো অত্যন্ত জরুরী। কিন্তু যদি নিয়মিত স্বাভাবিক ভাবে ঘুম না আসে, তাহলে ইচ্ছেমতো ওষুধ না খেয়ে চিকিত্সকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।