মধ্যস্বত্ত্বভোগীদের দখলে আমজনতার বাজার?

কোন সুযোগে বাজারে ঢুকছে মধ্যস্বত্ত্বভোগীরা? কেন খুচরো বিক্রেতারা তাদের ফাঁদে পা দিচ্ছেন? পাইকারি বাজারকে এড়িয়ে কিভাবে খুচরো ক্রেতাদের সমান্তরাল এই নেটওয়ার্কে টানছে ফড়ে বা দালালচক্র? কিভাবে কৃত্রিম উপায়ে বাড়ানো হচ্ছে দাম? ২৪ ঘণ্টার বিশেষ প্রতিবেদন।

Updated By: Jul 3, 2012, 08:31 PM IST

কোন সুযোগে বাজারে ঢুকছে মধ্যস্বত্ত্বভোগীরা? কেন খুচরো বিক্রেতারা তাদের ফাঁদে পা দিচ্ছেন? পাইকারি বাজারকে এড়িয়ে কিভাবে খুচরো ক্রেতাদের সমান্তরাল এই নেটওয়ার্কে টানছে ফড়ে বা দালালচক্র? কিভাবে কৃত্রিম উপায়ে বাড়ানো হচ্ছে দাম? ২৪ ঘণ্টার বিশেষ প্রতিবেদন।
পাইকারদের তুলনায় খুচরো বিক্রেতারা কেজি পিছু সবজি অনেকটাই বেশি দামে বিক্রি করছেন। অথচ খুচরো বিক্রেতাদের বক্তব্য, প্রতি কেজিতে মুনাফা থাকছে মাত্র তিন থেকে পাঁচ টাকা। তাহলে মাঝের বিপুল লাভের গুড় খাচ্ছে কে? কিভাবে পাইকারি ও খুচরো বিক্রেতাদের মধ্যে সুকৌশলে ঢুকে পড়েন মধ্যস্বত্ত্বভোগি বা ফড়েরা?
১) উদাহরণ হিসেবে কাঁচালঙ্কার কথা বলা যাক। রাজ্যে মূলত তিনটি এলাকায় উত্কৃষ্ট মানের কাঁচালঙ্কা পাওয়া যায়। এগুলি হল মেদিনীপুরের দাসপুর এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনার মগরাহাট  ও
বারুইপুর। এগুলি শহরের বাজারে ঢুকে পড়ার পর কোনও নিয়ন্ত্রণ না থাকার সুযোগে প্রচুর পরিমানে কিনে ১ বা ২ দিন মজুত করে ফড়েরা।
২) খুচরো বিক্রেতাদের সবচেয়ে বড় সমস্যা, তারা সরাসরি পাইকারি বাজার থেকে ৫ বা ১০ কেজি সামগ্রী কিনতে পারেননা। তাদের মধ্য কোনও স্বীকৃত সমবায় নেই। ফলে দশজন খুচরো ব্যবসায়ি একলপ্তে এক কুইন্টাল সামগ্রীও কিনতে পারেননা।  সেই সুযোগে মাঝে ঢুকে পড়ে ফড়ে।
৩) পাইকারি বাজারের আড়তদারের কাছে কৃষক তার উত্পাদিত পণ্য বিক্রি করে। সোজা হিসেবে আড়তদারদেরই তা সরাসরি খুচরো বিক্রেতাদের কাছে বেচার কথা। কিন্তু বাস্তবে খুচরো বিক্রেতাকে সামান্য পরিমান জিনিস বিক্রি করা আড়তদারের কাছে সময় নষ্ট। তার বদলে ফড়েদের কুইন্টাল হিসেবে পণ্য বিক্রি করলে তার টাকার যোগান নিয়েও সমস্যা নেই। বাজারে বেশিক্ষণ থাকারও প্রয়োজনীয়তা নেই।  
৪) অনেকক্ষেত্রে পাইকারি বাজার থেকে সরাসরি জিনিস কেনার জন্য একজন খুচরো বিক্রেতার হাতে পর্যাপ্ত টাকা থাকেনা। কারণ তিনি নিম্নবিত্ত। তার সামগ্রী বিক্রি হলে তবেই তার হাতে নগদ টাকা আসে। এখানেও নেটওয়ার্ক তৈরি করে ফড়েরা। তারা প্রয়োজনে খুচরো বিক্রেতাকে ধারে জিনিস দেয়। বিনিময়ে জিনিস কি দামে বেচা হবে তাও নির্ধারণ করে দেয় ফড়েরাই।
৫) ক্রমে এইভাবে বাজারের ওপর প্রভাব বিস্তার করে ফড়েরা। টাকার যোগান দিয়ে, প্রয়োজনে ধারে জিনিস দিয়ে তারা খুচরো বিক্রেতাদের কাছে অপরিহার্য হয়ে ওঠে। ধাপে ধাপে একটা গোটা বাজার ফড়েদের নিয়্ন্ত্রণে চলে আসে।
৬) জ্বালানির দাম ও অন্যান্য খরচ বাড়ায় এখন খুচরো বিক্রেতাদের অনেকের পক্ষেই সরাসরি পাইকারি বাজারে গিয়ে সামগ্রী কিনে খুচরো বাজারে নিয়ে এসে বিক্রি করা সম্ভব নয়। সেই সুযোগ কাজে লাগায় ফড়েরা। দোকানে দোকানে সরাসরি পণ্য পৌঁছে দেবার মত পরিকাঠামোও তৈরি করে ফেলে তারা।
এর ফলেই পাইকারি বাজার এড়িয়ে বেড়ে আনাজপত্রের বাজারে রমরমিয়ে চলছে ফড়ে-রাজ। নিত্যপ্রয়োজনীয় সবজি বাজারে আকাশ্ছোঁইয়া মূল্যবৃদ্ধির পিছনে এই মধ্যস্বত্ত্বভোগীদের অবদানকেই দায়ী করছে বিশেষজ্ঞ মহল।

.