বাস্তবে নৃশংস! সোশ্যাল মিডিয়ায় ‘মানবতার’ প্রতীক; ডুয়াল পার্সোনালিটি আফতাবের

দিল্লি পুলিসের হাতে গ্রেফতার হওয়ার পর থেকেই আফতাবের একের পর এক নৃশংসতার যে তথ্য উঠে আসছে তার সঙ্গে সোশ্যাল মিডিয়ার আফতাবের মিল খুঁজে পাওয়া কঠিন। তদন্তকারীদের বক্তব্য প্রকৃত মানসিকতা এবং লোক দেখানো মানসিকতার এই ডুয়াল পার্সনালিটি সুক্ষভাবে রক্ষা করতে সিদ্ধহস্ত আফতাব। 

Updated By: Nov 16, 2022, 11:18 AM IST
বাস্তবে নৃশংস! সোশ্যাল মিডিয়ায় ‘মানবতার’ প্রতীক; ডুয়াল পার্সোনালিটি আফতাবের

পিয়ালি মিত্র: বাস্তবে নৃশংস! সোশ্যাল মিডিয়ায় ‘মানবতার’ প্রতীক। আফতাব আমিনের ‘ডুয়াল পার্সোনালিটি’ চমকে দেওয়ার মতো। ২৯ নভেম্বর ২০১৪ সালে ‘Logical Indian’ নামে একটি ফেসবুক পেজের এই পোস্টটি নিজের ওয়ালে শেয়ার করে আফতাব আমিন পুণেওয়ালা। সেখানে লেখা ছিল, ‘মহিলারা লেবেল নিয়ে জন্মগ্রহণ করেন না। বৈষম্যের অবসান করুন!’

অ্যাসিডে পুডে যাওয়া এক তরুণীর সঙ্গে বলিউড অভিনেতার জন আব্রাহামের শেয়ার করা ছবি নিজের ওয়ালে শেয়ার করেন আফতাব আমিন পুণেওয়ালা। সেই পোস্টে লেখা ছিল, ‘সে তোমার আর আমার মতই সুন্দরী...অ্যাসিড আক্রমণ বন্ধ করুন...’।

সেই আফতাব ২৬ বছরের এক তরুণী যে তাঁর নিজের প্রেমিকা, তাকে শ্বাসরোধ করে খুন করেন। তারপর তাঁর নিথর শরীরকে ৩৫ টুকরো করতে একটুও হাত কাঁপেনি তাঁর। এই ঘটনায় গোটা দেশ শিউরে উঠলেও নির্বিকার ওই যুবকের দিল্লির মেহেরলি থানায় নির্লিপ্ত ভাবে ঘুমানোর ছবিও ভাইরাল হয়েছে ইতিমধ্যেই।

২৬ বছরের শ্রদ্ধার হত্যাকারী বাস্তবের আফতাবের সঙ্গে সোশ্যাল মিডিয়ার প্রোফাইলের আড়ালে থাকা আফতাবের যে কতটা ফারাক তা তাঁর সোশ্যাল মিডিয়া প্রোফালে ঢুকলেই বোঝা যাবে।

ফেসবুকে অ্যাসিড অ্যাটাক থেকে শুরু করে মহিলাদের সমান অধিকার নিয়েও সরব ছিল সে। এখানেই শেষ নয়, সোশ্যাল মিডিয়ায় পরিবেশবিদ হিসাবেও নিজেকে উপস্থাপন করেছে সে। সবুজয়ানের দাবি থেকে শুরু করে জলের অপচয় রুখতে প্রচার চালাতে দেখা গিয়েছে তাঁকে।

তার কাছে যে পুরুষদের তুলনায় মহিলারাই বন্ধু হিসেবে অগ্রাধিকার বেশি পেত তারও ইঙ্গিত মিলেছে তার ফেসবুক অথবা ইস্টগ্রাম প্রোফাইল থেকে। একাধিক বান্ধবীর সঙ্গে ছবি রয়েছে তার। ২০১৯ সাল পর্যন্ত ফেসবুকে যথেষ্ট সক্রিয় ছিল আফতাব। তারপর অবশ্য ফেসবুকে সক্রিযতা নজর আসেনি। তার পিছনে কোনও রহস্য রয়েছে কিনা সেটাও জানার চেষ্টা করছেন তদন্তকারীরা।

তার ফেসবুক প্রোফাইল অনুযায়ী শুরুর দিকে মহারাষ্ট্রের ভাসাইয়ের সেন্ট ফ্রান্সিস হাইস্কুল থেকে পড়াশোনা করেন তিনি। এরপরে ২০১৫ সালে L Rehja Collage থেকে বিএমএস (ব্যাচেলর অফ ম্যানেজমেন্ট স্টাডিস) পাশ করেন তিনি।

এক সময়ে আফতাব সেফ হিসাবে কাজ করেছেন বলেও জানা গিয়েছে। ইস্টাগ্রামে ‘Thenungrychokro’ বলে একটি অ্যাকাউন্টও চালাতো সে। সেখানে মূলত ফুড ফটোগ্রাফার হিসেবেই নিজেকেই উপস্থাপন করেছে আফতাব। যদিও তাঁর ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টও নিষ্ক্রিয় ২০১৯ সালের পর থেকে ।

আরও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল ফেসবুক প্রোফাইলে রিলিজিয়াস ভিউজের জায়গায় আফতাব বোল্ড অক্ষরে লিখে রেখেছে Humanism (মানবতা)। প্রশ্ন উঠছে সত্যি মানবতায় বিশ্বাসী হলে এক মহিলা যিনি তার লিভ ইন পার্টনার, তাকে এভাবে কী করে হত্যা করলেন তিনি।

আরও পড়ুন: Mumbai | Crime: লিভ-ইন পার্টনারকে ৩৫ টুকরো করে দিল্লিতে ছড়িয়ে দিল মুম্বইয়ের ফুড ব্লগার!

দিল্লি পুলিসের হাতে গ্রেফতার হওয়ার পর থেকেই আফতাবের একের পর এক নৃশংসতার যে তথ্য উঠে আসছে তার সঙ্গে সোশ্যাল মিডিয়ার আফতাবের মিল খুঁজে পাওয়া কঠিন। তদন্তকারীদের বক্তব্য প্রকৃত মানসিকতা এবং লোক দেখানো মানসিকতার এই ডুয়াল পার্সনালিটি সুক্ষভাবে রক্ষা করতে সিদ্ধহস্ত আফতাব। সেই কারণেই লিভ ইন পার্টনাকে খুনের পরের দিন থেকেই স্বাভাবিক জীবন যাপন শুরু করে দেয় সে।

আফতাবের এই কীর্তি উস্কে দিচ্ছে পুণেতে ঘটে যাওয়া এমনই আর এক নৃশংস হত্যাকাণ্ডের স্মৃতি। এই রাজ্যের বাঁকুড়ার মেয়ে আকাঙ্খা ভালোবেসে পুনে গিয়ে থাকতে শুরু করেছিলেন উদয়ন নামে এক যুবকের সঙ্গে। আকাঙ্খাকে বিদেশে চাকরি পাইয়ে দেওয়ার টোপ দিয়ে নিজের কাছে নিজে যায় উদয়ন। পরে তাঁর জালিয়াতি ধরে ফেলায় আকাঙক্ষকে খুন করে উদয়ন। প্রেমিকাকে খুন করে বাড়ির মধ্যে বেদী তৈরি করে দেহ পুঁতে রেখেছিল সে। শ্রদ্ধার মতো আকাঙ্খার বাড়ির লোকও মেয়ের খবর দীর্ঘদিন না পেয়ে খোঁজ শুরু করে। হত্যার এক বছর পর উদয়নের বাড়ির থেকে উদ্বার হয় দেহ।

সেই সূত্রেই জানা যায় কেবল প্রেমিকা নয়, নিজের বাবা এবং মাকেও একই ভাবে খুন করে মধ্যপ্রদেশের বাড়ির বাগানে দেহ পুঁতে রেখেছিল উদয়ন। পরপর খুন করে উদয়নও নির্বিকার জীবন যাপন করছিল। খুনের পরদিনই অন্য এক তরুণীকে নিয়ে সিনেমা দেখত যায় সে। ঠিক যেমন আফতাব ডেটিং সাইটে আলাপ হওয়া এক তরুণীকে বাড়িতে নিয়ে এসেছিল শ্রদ্ধা খুনের পরেরদিনই।

আফতাবের মতো উদয়নও সোশ্যাল মিডিয়াতে নিজেকে ভিন্ন ভাবধারার মানুষ হিসেবে মেলে ধরেছিল।

(Zee 24 Ghanta App দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির লেটেস্ট খবর পড়তে ডাউনলোড করুন Zee 24 Ghanta App)

.