দশ সাল বাদ রাহুলের দশ কা জবাব- নীতির লড়াইয়ে প্রতিপক্ষ মোদী, অর্জুনের লক্ষ্যে সিস্টেম বদল
গুজরাত দাঙ্গা সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী নিজের অবস্থান জানিয়েছেন। যখন গুজরাত দাঙ্গা বাঁধে, মানুষ মারা যায়, তখন নরেন্দ্র মোদী গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন। এটা রাজনৈতিক নয়, নীতিগত লড়াই এবং লড়াই আমরাই জিতব। ১৯৮৪ সালের সঙ্গে ২০০২ সালের দাঙ্গার পার্থক্য ছিল। সরকার ১৯৮৪ দাঙ্গা থামানোর সবরকম চেষ্টা করেছিল। কিন্তু মোদী গুজরাত দাঙ্গায় উসকানি দিয়েছিলেন।
দশ বছরে এই প্রথম বার টেলিভিশনে সাক্ষাত্কার দিলেন কংগ্রেসের সহ সভাপতি রাহুল গান্ধী। গুজরাট দাঙ্গা থেকে নিজের ভয়, অনেক কিছু নিয়ে মুখ খুললেন রাহুল। দশটি প্রশ্নের জবাবে রাহুলের উত্তর-(নিচে দেখুন সেই সাক্ষাত্কারের পুরো ভিডিও)
গুজরাত দাঙ্গা
গুজরাত দাঙ্গা সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী নিজের অবস্থান জানিয়েছেন। যখন গুজরাত দাঙ্গা বাঁধে, মানুষ মারা যায়, তখন নরেন্দ্র মোদী গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন। এটা রাজনৈতিক নয়, নীতিগত লড়াই এবং লড়াই আমরাই জিতব। ১৯৮৪ সালের সঙ্গে ২০০২ সালের দাঙ্গার পার্থক্য ছিল। সরকার ১৯৮৪ দাঙ্গা থামানোর সবরকম চেষ্টা করেছিল। কিন্তু মোদী গুজরাত দাঙ্গায় উসকানি দিয়েছিলেন।
হারের ভয়েই কি মোদীর সঙ্গে লড়তে ভয় পাচ্ছেন?
এই প্রশ্নটা বুঝতে হলে আগে বুঝতে হবে কে রাহুল গান্ধী। রাহুল গান্ধী জীবনে কী দেখেছে এবং রাহুল গান্ধী কী ভয় পায় বা পায় না। আমার জীবনে আমার ঠাকুমার হত্যা দেখেছি, আমার বাবার হত্যা দেখেছি। ঠাকুমাকে জেলে যেতে দেখেছি। শৈশবে ও বড় হয়ে ওঠার সময় আমি অনেক কষ্টের মধ্যে দিয়ে কাটিয়েছি। এত কিছুর পর আমার ভয় পাওয়ার, হারানোর কিছুই নেই।
রাহুলের লক্ষ্য
আমার লক্ষ্য খুব স্পষ্ট। দেশের রাজনীতিতে যেটা হচ্ছে সেটা আমার ভাল লাগে না। পুরাণে আমরা অর্জুনের কথা পড়েছি। অর্জুনের লক্ষ্য স্থির ছিল। শুধু একটা জিনিসই দেখতে পেত অর্জুন, আর কিছুই তার মাথায় ছিল না। আমাকে মোদী সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হোক বা অন্য কিছু সম্পর্কে, আমার শুধু একটাই লক্ষ্য রয়েছে। আমি চাই দেশের সিস্টেম বদলাতে। তাছাড়া আমার মাথায় আর কিছুই নেই। অন্য সব ব্যাপারে আমি অন্ধ। আমি অন্ধ কারণ আমি মানুষকে ভালবাসি আর দেখি তাদের এই সিস্টেম কীভাবে নষ্ট করে দিচ্ছে। রাহুল গান্ধীর মতোই দেশের লক্ষ লক্ষ তরুণের স্বপ্ন দেখে বদলের। আমি মহিলাদের উন্নয়ন চাই, তাঁদের ক্ষমতার স্ফূরণ চাই।
১৯৮৪ দাঙ্গায় ক্ষমা প্রার্থনা
কংগ্রেসের কিছু লোক হয়তো দাঙ্গার সঙ্গে যুক্ত ছিল। কিন্তু সেটাও আইনি পথে। আমি তখন ছোট ছিলাম এবং কোনওভাবেই দাঙ্গার সঙ্গে জড়িত ছিলাম না। তবে সব দাঙ্গার মতোই সেই দাঙ্গাও ভয়াবহ ছিল।
আম আদমি পার্টি
এখনও পর্যন্ত আমি মনে করি আপ ভোটে জিতেছে এবং আমাদের ওদের সাহায্য করা উচিত্। আমারা মনে করি ওদের যোগ্যতা প্রমাণের সুযোগ দেওয়া উচিত্। ওরা কতটা কী করেছে, কতটা করতে পারে সেটা মানুষ দেখতেই পাচ্ছে। আমি বলেছি আপ যেভাবে মানুষের কাছে পৌঁছেছে সেটা আমাদেরও শেখা উচিত্।
দুর্নীতি
দুর্নীতিগ্রস্থ মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি। সংসদে বিলও পাস হয়েছে। লোকপাল বিল। সবথেকে শক্তিশালী জিনিস। আমরা আরটিআই এনেছি, সংসদে এখনও ৬টি বিল রয়েছে। পুরো সিস্টেমেই একটা বদল প্রয়োজন। আমরা সবসময় ওপর ওপর সবকিছু দেখি। তলিয়ে ভাবা উচিত্। এখানে ক্ষমতা এক জায়গায় পুঞ্জীভূত হয়ে আছে। সেটাই দুর্নীতির মূল কারণ।
বদল
আমার মনে হয় পুরো রাজনৈতিক ব্যবস্থাকেই অন্য জায়গায় নিয়ে যেতে হবে। নতুন প্রজন্মকে জায়গা দিতে হবে। ক্ষমতা পূঞ্জীভূত হওয়াও আটকাতে হবে। এখন রাজনৈতিক ব্যবস্থা যে অবস্থায় রয়েছে তা সত্যিই চিন্তার বিষয়। আমরা কেউ ১০০ শতাংশ খুশি নই কিন্তু বদল আনতেই হবে।
জেতার সম্ভাবনা
যখন আমরা উত্তরাখণ্ডে, হিমাচলে, কর্নাটকে জিতেছি তখন আমি জড়িত ছিলাম না। কিন্তু যখন হেরেছি তখন হারের কারণ আমাকেই দেখা হয়। আমার মনে হয় কংগ্রেসে দলটার মধ্যেই ভেঙেচুরে আবার গঠন দরকার। সেখান থেকেই আমরা জিততে পারব।
পরিবারতন্ত্র
আমি সবসময় পরিবারের উল্লেখ করি না। একবার কী দুবার আমি নাম নিলেই সেটা খবর হয়ে যায়। আমি তো নিজে পছন্দ করে এই পরিবারে জন্মাইনি। আমার কাছে দুটো উপায়। হয় সবকিছু থেকে মুখ ফিরিয়ে নেব, অথবা এগিয়ে এসে বদলের উদ্যোগ নেব। আমি পরিবারতন্ত্রের বিরোধী। শুধু কংগ্রেসে নয়, বিজেপি, ডিএমকে, সপা সব পার্টিতেই রাজনীতিকদের সন্তানরা ক্ষমতাশালী হয়।
ব্যক্তিগত আক্রমণ
আমাকে কেন আক্রমণ করা হচ্ছে সেটা বুঝে আমি প্রতিক্রিয়া জানাই। আমাকে এই কারণ আক্রমণ করা হয় কারণ আমি সমাজের ক্ষতিকারক বিষয়গুলো নিয়ে প্রশ্ন তুলি। সবাই বুঝতে পারে যে আমি অমূলক বিষয় নিয়ে মাথা ঘামাই না। আমি অনেক গভীর ও অনেক দূরের কথা ভাবি। সেই কারণেই আমাকে আক্রমণ করা হয়। খোলাখুলি বলছি, আমাকে তোমরা যত খুশি আক্রমণ করো, মেরে ফেল, কিন্তু আমাকে থামাতে পারবে না। আমার যা করার আমি করেই যাব।