ICC ODI World Cup 2023, IND vs PAK: বাবর আজমদের ভারতের মাটিতে বিশ্বকাপ খেলা নিয়ে নতুন কোন নাটক শুরু করল পাকিস্তান? জেনে নিন
পাকিস্তান সরকার যাই সিদ্ধান্ত নিক, বাবর আজম ও তাঁর দল কিন্তু ভারতের মাটিতে এসে যে কোনও ভেন্যুতে এসে কাপ যুদ্ধ খেলতে প্রস্তুত হয়ে আছে। সেটা শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে টেস্ট সিরিজ খেলতে যাওয়ার আগে স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন পাক অধিনায়ক।
জি ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল ব্যুরো: ভারতের (India) মাটিতে বিশ্বকাপ (ICC ODI World Cup 2023) খেলতে আসার আগে পাকিস্তানের (Pakistan) নিত্যনতুন নাটক চলছেই। ভারতে নয়, বাবর আজমরা (Babar Azam) কোনও নিউট্রাল ভেন্যুতে খেলুক! দক্ষিণ আফ্রিকার (South Africa) ডারবানে আয়োজিত আইসিসি-র (ICC) মিটিং-এ এমনটাই দাবি তুলবেন পিসিবি-র (PCB) অন্তর্বর্তীকালীন চেয়ারম্যান জাকা আশরাফ (Muhammad Zaka Ashraf)। এমনটাই জানিয়েছেন সেই দেশের কেন্দ্রীয় ক্রীড়ামন্ত্রী হসান মাজারি (Ehsaan Mazari)।
সোমবার অর্থাৎ ১০ জুলাই, হাসান মাজারির বলেন, "জাকা আশরাফই এই ব্যাপারটা দেখছেন। ভারতীয় দল এশিয়া কাপ নিউট্রাল ভেন্যুতে খেললে, আমাদেরও সেই সুবিধা দেওয়া উচিত। আমরাও কোনও নিউট্রাল ভেন্যুতে বিশ্বকাপ খেলতে চাই।"
নিরাপত্তা কারণ দেখিয়ে পাক ভূমিতে এশিয়া কাপ (Asia Cup) খেলতে অস্বীকার করেছিল টিম ইন্ডিয়া। সেটা নিয়ে পাক ক্রিকেট বোর্ড প্রতিবাদ জানালেও লাভ হয়নি। সমস্যা সমাধানের জন্য তৎকালীন পিসিবি চেয়ারম্যান নাজম শেঠীই (Najam Sethi) হাইব্রিড মডেল সামনে এনেছিলেন। সেই নিয়ম মেনে মোট ১৩টি ম্যাচের মধ্যে ৪টি পাকিস্তানে ও বাকি ৯টি শ্রীলঙ্কায় আগামী ৩১ অগাস্ট থেকে ১৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এশিয়া কাপ আয়োজন হওয়ার কথা।
হাসান মাজারি ফের যোগ করেন, "নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে ভারতীয় দল আমাদের দেশে এশিয়া কাপ খেলতে আসেনি। তাহলে আমরা কেন ভারতে বিশ্বকাপ খেলতে যাব? আমাদের দেশের ক্রিকেটারদের নিরাপত্তাও তো বিঘ্ন হতে পারে!
পাকিস্তান দল বিশ্বকাপে খেলতে আসবে কিনা, সেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার ভার পাক সরকারের উপরেই ছেড়ে দিয়েছে পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড। ভারতে খেলতে আসা নিয়ে আলোচনা করতেই বিশেষ কমিটি গঠন করেছেন পাক প্রধানমন্ত্রী (Prime Minister of Pakistan) শাহবাজ শরিফ (Shahbaz Sharif)। সেই কমিটিতে বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারি (Bilawal Bhutto Zardari) ছাড়াও এই কমিটিতে রয়েছেন পাকিস্তানের একাধিক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। আইনমন্ত্রী থেকে শুরু করে পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ মন্ত্রী রানা সানাউল্লাহ সকলেই রয়েছেন এই কমিটিতে। তাছাড়াও বিদেশ মন্ত্রকের সচিব ও নানা গোয়েন্দা বিভাগের প্রধানকে কমিটিতে রেখেছেন পাক প্রধানমন্ত্রী। ভারতে খেলতে আসার পাশাপাশি নির্দিষ্ট কিছু ম্যাচের ভেন্যু নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে পাক ক্রিকেট মহলে। সেইসব বিষয় খতিয়ে দেখেই রিপোর্ট পেশ করবে এই বিশেষ কমিটি। এরপর এই বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন পাক প্রধানমন্ত্রী। এরইমধ্যে সেই দেশের ক্রীড়ামন্ত্রী বিতর্কিত মন্তব্য করে বসলেন।
তবে পাকিস্তান সরকার যাই সিদ্ধান্ত নিক, বাবর আজম ও তাঁর দল কিন্তু ভারতের মাটিতে এসে যে কোনও ভেন্যুতে এসে কাপ যুদ্ধ খেলতে প্রস্তুত হয়ে আছে। সেটা শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে টেস্ট সিরিজ খেলতে যাওয়ার আগে স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন পাক অধিনায়ক। করাচিতে সাংবাদিক বৈঠকে স্বভাবতই বিশ্বকাপ অভিযান সংক্রান্ত প্রশ্ন উড়ে এসেছিল। উঠেছিল ভারতের বিরুদ্ধে ম্যাচের কথা। বাবর বলেন, "বিশ্বকাপের মঞ্চে ভারতের বিরুদ্ধে তাদের দেশে খেলা, কিংবা সেই ম্যাচ জেতা নিয়ে এখন থেকে ভাবতেই চাইছি না। কারণ এতে অহেতুক চাপ বাড়বে। আর শুধু ভারতের বিরুদ্ধে ম্যাচ নয়, বিশ্বকাপ জেতাই আমাদের মূল লক্ষ্য। আর তাই আমরা বিশ্বকাপ জিততে মাঠে নামব।
এশিয়া কাপ নিয়ে জটিলতা চলতে থাকার জন্য পাকিস্তান আদৌ বিশ্বকাপ খেলতে ভারতে আসবে কিনা, সেটা নিয়ে অনেকের মনে প্রশ্ন ছিল। এমনকি আহমেদাবাদে বাইশ গজের মহারণ আয়োজিত হওয়া নিয়েও আপত্তি জানিয়েছিল পিসিবি। যদিও সেই আপত্তি পাত্তা দেয়নি আইসিসি ও বিসিসিআই। তবে বাবর কিন্তু ভেন্যু নিয়ে একেবারেই চিন্তিত নন। সেটা তাঁর কথায় স্পষ্ট। পাক অধিনায়কের প্রতিক্রিয়া, "পেশাদার হিসেবে আমরা সব ভেন্যুতে খেলতেই পছন্দ করি। যেখানে ক্রিকেট, যেখানে ম্যাচ ফেলা হবে, আমরা সেখানে গিয়েই খেলব। যে কোনও দেশেই পারফর্ম করতে তৈরি আমরা।"
আহমেদাবাদ ছাড়া হায়দরাবাদ, চেন্নাই, বেঙ্গালুরু এবং কলকাতায় খেলতে নামবে পাকিস্তান। সেই সব কেন্দ্রগুলি খতিয়ে দেখার জন্যই পাক প্রতিনিধি দল আসবে ভারতে। ম্যাচ কেন্দ্রগুলির ভেন্যু খতিয়ে দেখার পরে সেই প্রতিনিধি দল একটি রিপোর্ট পেশ করবে। সেই রিপোর্টের ভিত্তিতেই পাক দল ভারতের মাটিতে পা রাখবে।
ভারত বনাম পাক ম্যাচ নিয়ে এর আগেও জটিলতা তৈরি হয়েছে। ২০১১ সালে ৫০ ওভারের বিশ্বকাপ থেকে ২০১৬ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলতে আসা নিয়েও অনেক জট পেকেছিল। কিন্তু দিনের শেষে সব ইগো ও রাজনীতির লড়াইকে পিছনে ফেলে জিতেছিল ক্রিকেট। এবারও তেমনই কিছু ঘটবে বলে আশা করছে ক্রিকেট দুনিয়া। ১৫ অক্টোবর আহমেদাবাদের (Ahmedabad) নরেন্দ্র মোদী স্টেডিয়ামে (Narendra Modi Stadium) রোহিত শর্মার (Rohit Sharma) টিম ইন্ডিয়ার (Team India) বিরুদ্ধে বাইশ গজের যুদ্ধে নামবে পাক দল। স্বভাবতই 'মাদার অফ অল ব্যাটল'-কে ঘিরে উত্তেজনা তুঙ্গে। তবে বাবর আজম কিন্তু শুধু চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী দেশের বিরুদ্ধে খেলতে মুখিয়ে নেই। বরং পুরো কাপ যুদ্ধ নিয়েই ভাবছেন। এবং ১৯৯২ সালের রিমেক ঘটিয়ে ইমরান খানের (Imran Khan) পর ফের একবার বিশ্বকাপ হাতে তুলতে মরিয়া হয়ে আছেন। এখন তাঁর দেশের সরকার কবে সবুজ সংকেত দেয় সেটাই দেখার।
বিশ্বকাপে পাকিস্তানের ম্যাচ—
৬ অক্টোবর কোয়ালিফায়ার ১ (হায়দরাবাদ)
১২ অক্টোবর কোয়ালিফায়ার ২ (হায়দরাবাদ)
১৫ অক্টোবর ভারত (আহমেদাবাদ)
২০ অক্টোবর অস্ট্রেলিয়া (বেঙ্গালুরু)
২২ অক্টোবর আফগানিস্তান (চেন্নাই)
২৭ অক্টোবর দক্ষিণ আফ্রিকা (চেন্নাই)
৩১ অক্টোবর বাংলাদেশ (কলকাতা)
৪ নভেম্বর নিউজিল্যান্ড (বেঙ্গালুরু)
১২ নভেম্বর ইংল্যান্ড (কলকাতা)