'বাপি কখন আসবে?' মায়ের জ্ঞান ফিরলেই জিজ্ঞাসা করছে লাদাখে শহিদ বাঙালি জওয়ানের ছোট্ট মেয়ে!
কিন্তু আলিপুরদুয়ারের টটপাড়ার বীর জওয়ান বিপুল রায়ের সেই স্বপ্নপূরণ হল না। পাঁচ বছরের ছোট্ট মেয়ের কাছে আসছেন তিনি, কিন্তু কফিনবন্দি হয়ে, নিঃসার দেহে।
নিজস্ব প্রতিবেদন: আর মাত্র একটা বছর ছিল। সেনাবাহিনীর চাকরিজীবন শেষ করে এবার পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানোর শখ ছিল তাঁর। অনেক ছোটো বয়সেই, মাধ্যমিক পাশ করেই সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়েছিলেন, স্বপ্ন ছিল দেশসেবা করার। সেই সাধপূরণ হয়েছে, কিন্তু এখন তিনি স্বপ্ন দেখতেন ছোট্ট মেয়েটা তাঁর আঙুল ধরে হাঁটবে, তাকে নিয়ে খেলবেন। কিন্তু আলিপুরদুয়ারের টটপাড়ার বীর জওয়ান বিপুল রায়ের সেই স্বপ্নপূরণ হল না। পাঁচ বছরের ছোট্ট মেয়ের কাছে আসছেন তিনি, কিন্তু কফিনবন্দি হয়ে, নিঃসার দেহে।
মঙ্গলবার রাত দশটায় ফোনটা এসেছিল। ফোন ধরেছিলেন তাঁর স্ত্রী রুম্পা রায়ই। তারপর থেকে গোটা আকাশটাই ভেঙে পড়েছে রায় পরিবারের ওপর। বাড়িতে ভিড় জমাচ্ছেন প্রতিবেশীরা। ছোট্ট পাঁচ বছরের মেয়েটি সব দেঁখছে, হয়তো বুঝছেও কিছু! শুধু মুখে বলছে, 'বাবা, বাপির কী হয়েছে?'
লাদাখে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ওপর চিনা সৈন্যদের হামলায় শহিদ হয়েছেন আলিপুরদুয়ারের জওয়ান বিপুল রায়ও। তিনি ভারতীয় সেনাবাহিনীর সিগন্যাল রেজিমেন্টের জওয়ান ছিলেন।
ভাটিবাড়ি হাইস্কুল থেকে মাধ্যমিক পাশ করেই সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়েছিলেন বিপুল রায়। দেশসেবা করার ইচ্ছা তাঁর ছিলই, তাই ছোট থেকে সুযোগ পেয়ে হাতছাড়া করেননি। প্রত্যেক বছরই বাড়িতে আসতেন নিয়ম করে।
অবসরের আর একটা বছর বাকি ছিল। ভেবেছিলেন এবার ফিরে স্ত্রী, ছোট্ট মেয়ে তমান্না আর বাবা-মাকে নিয়ে সংসারেই মন দেবেন।
কিন্তু সেটা আর হল না। তিনি ফিরছেন বটে, কিন্তু কফিনবন্দি হয়ে।
বাড়ি আসার কথা ছিল, কিন্তু লকডাউনে ফিরতে পারেননি, বীরভূমের বীর জওয়ান রাজেশ ফিরছেন কফিনবন্দি হয়েই...
মাঝেমধ্যেই জ্ঞান হারাচ্ছেন স্ত্রী। ঝাপসা হয়ে আসছে বিপুলবাবুর বাবার দুটো চোখ। কোনও কথা বলার মতো পরিস্থিতিতে নেই কেউ। শুধু বললেন, "বুকের ভিতরটা ফেটে যাচ্ছে। ছেলেটা বাড়ি ফিরত, লকডাউনে আর ফিরতে পারেনি। ও তো দেশমায়ের কোলেই গেল, ও তো মরে নাই!"