বাঁকুড়া শিশু পাচারকাণ্ডে পুলিসের জালে গ্রেফতার মূল মধ্যস্থতাকারী

এক লক্ষ সত্তর হাজার টাকার বিনিময়ে দুই কন্যা সন্তান সহ ৯ মাসের পুত্র সন্তানকে কিনে নেন সতীশ ঠাকুর ও অধ্যক্ষ কমল কুমার রাজোরিয়া

Updated By: Jul 21, 2021, 03:38 PM IST
বাঁকুড়া শিশু পাচারকাণ্ডে পুলিসের জালে গ্রেফতার মূল মধ্যস্থতাকারী

নিজস্ব প্রতিবেদন: বাঁকুড়া শিশু পাচারকাণ্ডে পুলিসের জালে আরও এক ব্যক্তি। পেশায় ব্যবসায়ী বিকাশ গুপ্তা নামে ওই ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়েছে দুর্গাপুর থেকে।

বাঁকুড়ার জওহর নবোদয় বিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ কমল কুমার রাজোরিয়াকে জেরা করে বিকাশ গুপ্তার নাম ওই ব্যক্তির নাম পায় পুলিস। শিশু পাচারকাণ্ডে এই বিকাশ গুপ্তার প্রধান ভূমিকা রয়েছে বলে মনে করছে পুলিস।

আরও পড়ুন- বাতিল হয়ে যেতে পারে টোকিও অলিম্পিক! কোভিড বৃদ্ধিতে উদ্বেগ

তদন্তকারীদের ধারনা যে পাঁচ শিশুকে পাচার করা হচ্ছিল তাদের কেনাবেচার ক্ষেত্রে মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালন করেছিল  এই বিকাশ গুপ্তা। অধ্যক্ষ কমল কুমার রাজোরিয়া ও সতীশ ঠাকুরের সঙ্গে মেনগেট এলাকার চায়ের দোকানদার স্বপন দত্তের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয় এই বিকাশ গুপ্তা। এই স্বপন দত্তের সূত্র ধরেই ওই পাঁচ শিশুর মা রিয়া বাদ্যকরের সঙ্গে শিশু কেনাবেচার পরিকল্পনা করে অধ্যক্ষ কমল কুমার রাজোরিয়া।

এদিকে, ধৃত রিয়া বাদ্যকরকে জেরা করে বিস্তর অসংগতি পেয়েছে পুলিস। রিয়ার দাবি, সে-ই ওই ৫ শিশুর মা। কিন্তু মাত্র ২৩ বছর বয়সে সে কীভাবে ৫ সন্তানের মা হতে পারে তার হিসেব মেলাতে পারছে না পুলিস। এর জন্য ওই ৫ শিশুর ডিএনএ টেস্ট করার কথা ভাবছে পুলিস। জেরায় উঠে এসেছে সম্প্রতি রিয়ার স্বামী মারা গিয়েছে। সেক্ষেত্রে দ্বিতীয় বিয়ে করার পথে কাঁটা সরাতে নিজের ৫ সন্তানকে বিক্রির পরিকল্পনা করে রিয়া বাদ্যকর।

শিশু পাচার কান্ডে বাঁকুড়ার জওহর নবোদয় বিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ কমল কুমার রাজোরিয়ার সম্পর্কে খোঁজ খবর নিতে গিয়ে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হাতে এসেছে তদন্তকারীদের। জানা গেছে কমল কুমার রাজোরিয়া রাজস্থানের বাসিন্দা। তাঁর শিক্ষকতার চাকরি জীবনের বেশিরভাগ সময় রাজস্থানে কাটলেও বছর চারেক আগে তিনি জওহর নবোদয় বিদ্যালয়ের অধ্যক্ষর দায়িত্ব নিয়ে বাঁকুড়ায় আসেন। তাঁর দুই মেয়ে ও এক ছেলে। মেয়েদের বিয়ে হয়ে যাওয়ার পর বেসরকারি সংস্থায় কর্মরত ছেলেকে নিয়ে তাঁর স্ত্রী থাকতেন রাজস্থানেই। জওহর নবোদয় বিদ্যালয়ের শিক্ষক আবাসনে একাই থাকতেন অধ্যক্ষ কমল কুমার রাজোরিয়া। তাঁর বাড়িতে যাতায়াত ছিল স্থানীয় দুই ব্যাক্তির। একজন অধ্যক্ষর রান্নাবান্না করে দিতেন অন্যজন বাড়ির অন্যান্য কাজ করতেন। সপ্তাহ খানেক আগে দুই কন্যা শিশুকে বাড়িতে এনে রাখায় সন্দেহ হয় তাঁদের। বিষয়টি নজর এড়ায়নি প্রতিবেশী শিক্ষক পরিবারগুলিরও। কমল কুমার রাজোরিয়া ওই দুই শিশুকে তাঁর আত্মীয়র সন্তান হিসাবে পরিচয় দিয়েছিলেন কাজের লোক ও প্রতিবেশীদের কাছে।

আরও পড়ুন-ত্রিপুরায় ২১ জুলাই: তৃণমূল নেতার উপর 'হামলা', গ্রেফতার দলের ৮২ জন কর্মী  

পুলিস জানতে পেরেছে বেশ কিছুদিন ধরেই জওহর নবোদয় বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা সুষমা শর্মা ও তাঁর স্বামী অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মী সতীশ ঠাকুর নিঃসন্তান হওয়ার কারনে একটি শিশু কেনার পরিকল্পনা করেছিলেন। সেই পরিকল্পনায় কোনোভাবে যুক্ত হয়ে পড়েন অধ্যক্ষ কমল কুমার রাজোরিয়া। সেই উদ্যেশ্যে অধ্যক্ষ কমল কুমার রাজোরিয়াকে নিয়ে সতীশ ঠাকুর একাধিক বার দুর্গাপুরের মেনগেট এলাকায় যান। সেখানেই মুদি দোকানি বিকাশ গুপ্তার মাধ্যমে আলাপ হয় স্থানীয় বাসিন্দা রিয়া বাদ্যকরের। রিয়ার পাঁচ সন্তানের মধ্যে ৯ মাস বয়সী পুত্র সন্তানকে মোটা টাকার বিনিময়ে কিনতে চান সতীশ ঠাকুর। কিন্তু বেঁকে বসে রিয়া। সে জানায় তার দুই কন্যা সন্তানকে কিনলে তবেই সে ৯ মাসের পুত্র সন্তানকে বিক্রি করবে। এরপরই এক লক্ষ সত্তর হাজার টাকার বিনিময়ে দুই কন্যা সন্তান সহ ৯ মাসের পুত্র সন্তানকে কিনে নেন সতীশ ঠাকুর ও অধ্যক্ষ কমল কুমার রাজোরিয়া। সতীশ ঠাকুর ও তাঁর শিক্ষিকা স্ত্রী সুষমা শর্মা ৯ মাসের পুত্র সন্তানকে রাখলেও বাকি দুই কন্যা সন্তানকে রেখে দেওয়া হয় অধ্যক্ষর আবাসনে।

(Zee 24 Ghanta App : দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির লেটেস্ট খবর পড়তে ডাউনলোড করুন Zee 24 Ghanta App)

.