Durga Puja 2022: কুমোরটুলিতে দুর্গার পাশেই চারদিন পুজো পান রামকৃষ্ণ
Kumartuli, Durga Pujo 2022 : ভবনের মালিক কবিরাজ গঙ্গাপ্রসাদ সেন। তাঁর কাছেই অসুস্থ রামকৃষ্ণদেবকে চিকিৎসার জন্য মথুরবাবু এনেছিলেন। সেই সেনবাড়িতেই দুর্গাপুজো হচ্ছে প্রায় ১৮১ বছর ধরে। কোনও দিনও সেই পুজোয় ছেদ পড়েনি। বরং সেবারে দুর্গাপ্রতিমার সঙ্গে সঙ্গে নিষ্ঠাভরে আরাধনা হয় শ্রী রামকৃষ্ণ পরমহংসদেবেরও। আজও দেবী প্রতিমা, পাশে ঠাকুর রামকৃষ্ণদেবের পুজো চলেছে সমস্ত নিয়ম নিষ্ঠা মেনে। জি ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল ব্যুরো
Kumartuli 2022, জি ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল ব্যুরো: দুর্গা পুজোয় কলকাতার আরও এক ইতিহাসে কান পাতা যাক। ইতিহাসটি লুকিয়ে আছে কুমোরটুলির গঙ্গাপ্রসাদ ভবনে। ভবনের মালিক কবিরাজ গঙ্গাপ্রসাদ সেন। তাঁর কাছেই অসুস্থ রামকৃষ্ণদেবকে চিকিৎসার জন্য মথুরবাবু এনেছিলেন। সেই সেনবাড়িতেই দুর্গাপুজো হচ্ছে প্রায় ১৮১ বছর ধরে। কোনও দিনও সেই পুজোয় ছেদ পড়েনি। বরং সেবারে দুর্গাপ্রতিমার সঙ্গে সঙ্গে নিষ্ঠাভরে আরাধনা হয় শ্রী রামকৃষ্ণ পরমহংসদেবেরও। কলকাতায় কুমোরটুলিতে তখন রব ওঠে, 'এখানে কৃপার ঝুলি, ঢেলে দিল ভগবান। রামকৃষ্ণ অবতার -জীবনোদ্ধারে আসা তাঁর, দেবদেহে দৈবরোগ ভান।'
কবিরাজ গঙ্গাপ্রসাদ সেনের বাড়ির ঠিকানা, ১৭ কুমারটুলি স্ট্রিট। বাড়ির দালানের এককোণে চলছে ঠাকুর গড়া। ঘরের দরজা খুলতেই দেওয়াল জুড়ে ইতিহাস। কড়ি বরগার ছাদ থেকে ঝাড়বাতির আলোয় যেন রোমাঞ্চ জাগায় ইতিহাসের সেই সাক্ষীরা। ইতিহাসের গর্বে যেমন উজ্জ্বল এই বাড়ি তেমনই পরম্পরা ও ঐতিহ্যের বাহক এই ভবন। প্রায় ১৮১ বছর ধরে এই সেন পরিবারে দুর্গা আরাধনা হয়ে আসছে। ঢাকার প্রবাদ প্রতিম কবিরাজ নীলাম্বর সেন বিক্রমপুরে নিজের বাড়িতে যে দুর্গাপুজো প্রচলন করেন। নীলাম্বর সেনের কলকাতায় গঙ্গার পাড়ে এই ভবন নির্মাণ করেন। বাংলাদেশে বিক্রমপুরের সেই পুজো ১৮৪০ সালে উঠে আসে কলকাতার এই বাড়িতে। শেষ জীবনে ঠাকুরের গলায় ক্যান্সার ধরা পড়ে। তাঁর একাধিক শিষ্য তাঁকে আয়ুর্বেদ, ইউনানি, হোমিওপ্যাথির প্রায় ৩৮ জন চিকিৎসকের তালিকা তৈরি করে দেন। এই তালিকায় শীর্ষে যে নামটি ছিল, তিনি স্বয়ং গঙ্গাপ্রসাদ সেন। রামকৃষ্ণ কথামৃতের রচয়িতা শ্রী মদন গুপ্ত, ঠাকুরকে উদ্ধৃত করে লিখেছেন, 'তখন আমার ভারি ব্যমো। আমি পরমহংস। কারুর কথাই মানিনা। শুধু মায়ের কথা শুনি। আর বেদবাক্য বলে মেনেছি কবিরাজ গঙ্গা সেনের কথা'। এই ভাবেই কুমোরটুলি স্ট্রিটের গঙ্গাপ্রসাদ ভবন ইতিহাসে আধ্যাত্মিকতার চেতনায় ধন্বন্তরী।
আরও পড়ুন : Durga Pujo 2022 : করোনা প্রকোপ শেষে দুর্গাপুজোকে ইউনেসকোর স্বীকৃতি, কুমোরটুলির ভাগ্য খুলল কি?
গঙ্গার নিম্নগতিতে ইতিহাস যেন খরস্রোতা। গঙ্গার বয়ে যাওয়া জলধারার মতই ইতিহাসও বয়ে যায় অববাহিকা জুড়ে। সাবর্ণ রায়চৌধুরী, শোভাবাজার রাজবাড়ীর পরেই কলকাতার অন্যতম প্রাচীন এই পুজো। এখানে দুর্গা আরাধনা শুধুই পুজো নয়। এমন এক পরম্পরা, এমন এক ঐতিহ্য যা মিলনের ক্ষেত্র। কোনও দিন এই বাড়ির পুজো বন্ধ হয়নি। বিশ্বযুদ্ধ, মন্বন্তর, মহামারি, অতিমারি, প্রাকৃতিক দুর্যোগ যাই হোক না কেন দুর্গাপুজো হয়েছে প্রতি বার। করোনা অতিমারীর কড়াকড়িতেও বাড়ির দরজা হাট করে দিয়েছিলেন। দেবী প্রতিমা, পাশে ঠাকুর রামকৃষ্ণদেবের পুজো চলেছে সমস্ত নিয়ম নিষ্ঠা মেনে।