মালামাল উইকলির থেকেও বাস্তবের এই লটারির ঘটনা বেশি উত্তেজক

Updated By: Jul 23, 2016, 07:50 PM IST
 মালামাল উইকলির থেকেও বাস্তবের এই লটারির ঘটনা বেশি উত্তেজক

স্বরূপ দত্ত

আপনি ভানু পেল লাটারি দেখেছেন? দেখেননি! এ বাবা। ঠিক আছে। পরে সময় করে দেখে নেবেন কখনও। আচ্ছা, আপনি নিশ্চয়ই প্রিয়দর্শনের মালামাল উইকলি দেখেছেন? আর হাসতে হাসতে লুটিয়ে পড়েছেন। টেলিভিশনে যখনই সিনেমাটা দেয়, সে মাঝখান থেকে হলেও আপনি নিশ্চয়ই এখনও দেখে নেন। সেটাই তো স্বাভাবিক। অমন সিনেমা হাজারবার দেখা যায়। অনাবিল ভালোলাগা। লটারি নিয়ে আপনার কি কোনও ফ্যান্টাসি আছে? মানে, আপনি নিয়মিত লটারি কাটেন? হয়তো কাটেন মাঝেমাঝে। কিংবা একেবারেই কাটেন না হয়ত। আমারটা বলে দিই। না, আমার কখনও লটারির টিকিট কাটা হয়ে ওঠে না। আসলে রোজগার যে এত সহজে হতে পারে, আমার আজও বিশ্বাস করতে বেশ সন্দেহই হয় (নিজের ক্ষেত্রে)। তবে, চেনা-পরিচিত অনেকেরই লটারিতে প্রাপ্তি দেখার সৌভাগ্য হয়েছে আমার। সেটাই বা কম কী!

লটারির টিকিট না কাটলেও, এই লটারি বিষয়টা নিয়ে আমার অনেক ফ্যন্টাসি আছে। একটা সময় তো রীতিমতো লটারির চর্চা করতাম। আপনার মনে হতে পারে, হঠাত্ করে লটারি নিয়ে পড়লাম কেন? আসলে, বাস্তবে আমি মালামাল উইকলির থেকেও ভালো লটারির গল্প পেয়ে গিয়েছি। কারণ, এখানে সব থাকলেও, লোভটাই নেই। আমাদের অফিসেরই গাড়িচালক সাত্তার মোল্লা। বয়স ওই বছর পঞ্চান্ন। বড় মিশুকে মানুষ। তাই দেখা হলেই কুশল বিনিময় করেন। তাঁর গাড়িতে করেই এক রাতে বাড়ি ফিরছিলাম। গল্প করতে করতে, শুনে ফেললাম সাত্তারদার জীবনের লটারির গল্প। সেটাই ছোট করে আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করি। শুধু পড়বেন না। অনুভব করবেন। ভাবার চেষ্টা করবেন, আপনার সঙ্গে এরকম ঘটনা ঘটলে, কী করতেন আপনি। তাহলে ছোট্ট করে শুরু এবং শেষ করি।

সাত্তার দা ডায়মণ্ড হারবারের মানুষ। অভাবের পরিবারের ছেলে, তাই আর স্কুলে যাওয়া হয়নি সেভাবে। ছেলেবেলা থেকেই করতে হয়েছে উপার্জন। এই গাড়ি চালিয়েই। জীবনে কত বছরে, কত কিলোমিটার যে গাড়ি চালালেন, তার ইয়ত্তা নেই। সেই সাত্তারদা বছর সাতেক আগে এক কাপড়ের ব্যবসায়ির গাড়ি চালাতেন। কাপড়ের ব্যবসায়ী বড্ড বিত্তবান। তা একদিন সাত্তার দা বসে আছেন, তাঁর বড়বাজারের দোকানে। যদি কোথাও বেরোতে হয় গাড়ি নিয়ে। পুজোর একটু আগে-আগের ঘটনা। সাত্তার-দার মালিক তাঁর হাতে ১০০০ টাকা গুঁজে দিয়ে লটারির টিকিট কেটে আনতে বলেন। কেনেন সাত্তার-দা। তার আগে বলেও যান মালিককে, 'কেন যে, লটারি কেটে টাকা নষ্ট করেন!'

সাত্তার-দা হাতে করে ৫০০ টাকা দামের দুটো লটারির টিকিট কেটে আনেন দিওয়ালি বাম্পারের! সময় এগিয়ে চলে। ওই দিওয়ালি বাম্পার লটারির ফলপ্রকাশ পায়। কিন্তু সাত্তার-দা তো বটেই, তাঁর মালিকেরও আর মনে থাকে না, কাটা টিকিটের ফলের কথা। কিন্তু সেই লটারিওয়ালাই মনে করিয়ে দেয়। আর লটারির টিকিট সাত্তার-দার মালিক মিলিয়ে ফেলেই বুঝে যান, কিছু একটা ঘটেছে। মালামাল উইকলির পরেশ রাওয়ালের অভিব্যক্তিগুলো ভাবার চেষ্টা করুন। কারণ, সাত্তার-দার মালিক নিশ্চিত হন, ওই দুটো টিকিটের একটিতে বেঁধেছে প্রথম পুরস্কার! হ্যাঁ, ফার্স্ট প্রাইজ! আর ৫০০ টাকার বিনিময়ে সাত্তার-দার মালিকের পাওয়া পুরস্কার অর্থের পরিমাণ ছিল ১ কোটি টাকা! হ্যাঁ, সাত্তার-দার হাতে করে কেটে আনা লটারির টিকিটে পুরস্কার পাওয়া গিয়েছে ১ কোটি টাকা! কিন্তু লটারির টিকিটটা সাত্তার-দার হাতে কাটা শুধু। কিন্তু টিকিট যে তাঁর নয়। কারণ, তাঁকে টিকিট কাটার টাকা যে দিয়েছিলেন তাঁর মালিকই! আপনি অনুভব করুন, সেই সময় সাত্তার-দার বুকটা।

পরে সেই 'মালিক' সাত্তার-দাকে ২০ হাজার টাকা দিয়েছিলেন খুশি হয়ে। আর ১৫ দিনের জন্য পরিবারের সঙ্গে ঘুরতে নিয়ে গিয়েছিলেন 'বম্বে টু গোয়া'! সাত্তার দা ওই ২০ হাজার টাকায় ছোট্ট এক ফালি জমি কিনেছেন। তারপর থেকে সাত্তার দা-ও নিয়মিত কাটা শুরু করলেন লটারি। কিন্তু সে কি আর বারবার হয়! বছর কয়েক পর সাত্তার দা বোঝেন, তাঁর আর লটারি থেকে প্রাপ্তি নেই। এক সময়ে লটারি কাটা ছেড়েই দেন সাত্তার দা। তাঁর স্ত্রী তাঁকে এক রাতে গল্প করতে করতে বলে, 'তুমি যখন বড়লোকের জন্য লটারি কাটো, তখন তোমার পুরস্কার ওঠে। আর সেই তুমিই যখন তোমার জন্য টিকিট কাটো, তখন ফেরো শূন্য হাতে!'

ভাবার চেষ্টা করি, ওই ঘটনার সাতটা বছর পরেও সাত্তার দা কীভাবে এত হাসিখুশি থাকতে পারেন। কীভাবে দুর্বার গতিতে যাত্রীকে নির্দিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছে দিতে পারেন! আমার নিজের হাতে কাটা লটারির টিকিটে পাওয়া গেল এক কোটি টাকা! আর আমি নিজে হাতে পেলাম মাত্র ২০ হাজার টাকা! রাতে ঘুম আসতো আমার? বাঁচতাম আমি আজও এত হাসিমুখে? না, সাত্তার দা-রা তো তথাকথিত গরিব। বুদ্ধিজীবী নন। তাই তাঁদের জীবনে অবসাদ আসতে নেই। ওসব বড়লোকের না পাওয়ার রোগ। সৃষ্টিশীল মানুষের রোগ। ভাগ্যিস তাই। না হলে, এক কোটি টাকা নিজের 'ভাগ্যে' পেয়েও হারানোর দুঃখ না দেখে মানুষটাকে এমন অনাবিল হাসতে দেখতাম কীভাবে! আমার জীবনে দেখা বা শোনা সবথেকে উত্তেজক লটারির গল্প এটাই! আপনি যদি সাত্তার-দা মানুষটার জায়গায় নিজেকে বসিয়ে অনুভব করতে পারেন লেখাটা পড়ার পর, আমি নিশ্চিত, আপনারও আজ রাতে চোখে ঘুম আসবে না। মজাটা এখানেই। সাত্তার দা ঘুমোতে পারেন। সেদিনের রাত থেকে আজও। সবশেষে বলার, সাত্তার দা, শিখলাম বটে, কিন্তু মনে হয় না কোনওদিন তোমার মত হতে পারতাম।

আরও পড়ুন ফিতের ফাঁসে জীবন হাসফাঁস

.