''আমার বডিগার্ডের চোটটা সারিয়ে দাও হে ঈশ্বর'' : হেজেল
ভারত জিতেছে। সবাই খুশিতে পাগল। এবার টি২০ বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল হবে মুম্বইতে। ওয়াংখেড়েতে। ভালোই হবে। ম্যাচটা দেখতে পারবো। না, এতটাও ভালো খবর আর পরিবেশ-পরিস্থিতি আমার জন্য এখন নেই। বড় চিন্তায় আছি। যুবির পায়ে ব্যাথাটা বেড়েছে। ঠিক মতো হাঁটতে পারছে না। জানি না, ওয়েস্টইন্ডিজের বিরুদ্ধে ও খেলতে পারেব কিনা! তাই আরও হতাশ লাগছে। বুঝতে পারছি না, যুবিকে সামলাবো কীভাবে। অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ম্যাচটা দেখতে দেখতে এবং তারপর থেকে যে কথাগুলো মনে হল, সেগুলোই আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করতে বসলাম।
১) যুবির পায়ে যখন লাগলো প্রথমবার, তখনই বুকটা ধড়াস করে উঠল। তখনও মোহালির গোটা গ্যালারি চ্যাঁচাচ্ছে। 'জিতেগা ভাই জিতেগা, ইন্ডিয়া জিতেগা।' 'সিং ইজ কিং, যুবরাজ সিং।' এমন সময় হঠাত্ করে পায়ে লাগলো যুবির। প্রথমে ভাবলাম, তেমন কিছু নয়, একটু পরেই ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু তারপরই বুঝলাম, না-বেশ লেগেছে ওর। মুখটার দিকে তাকাতে পারছিলাম না। যন্ত্রণায় কুঁকড়ে যাচ্ছিল ও। ওভাবে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটতে দেখলে আমার মনটা কেমন হয়, কীভাবে বোঝাই আপনাদের। আপনারা শুধু চাইছিলেন, 'রান, যুবি রান'। কিন্তু কীভাবে দৌঁড়বে যুবি! ওর যে তখন খুব কষ্ট হচ্ছে।
২) এরপর যখন আউট হল ১৮ বলে ২১ রান করে, তখন যেন যন্ত্রণাটা আরও বেড়ে গেল। দুজনেরই। ওর পায়ের। আমার বুকের। কারণ, যুবি যখন আউট হল, তখনও ইন্ডিয়া ম্যাচটা জেতার মতো পরিস্থিতিতে অতটা সহজে ছিল না। পরে বিরাট দারুণ খেলল বলে, ইন্ডিয়া সহজে ম্যাচ জিতে নিল। কিন্তু সেটা তো পরের ঘটনা। যখন যুবি আউট হল, তখন অত সব বুঝবো কীভাবে! আমি এসেক্সে বড় হয়েছি। ক্রিকেটটা ছেলেবেলা থেকেই বেশ বুঝি। আমাদের কাউন্টিগুলোতে ছেলেবেলা থেকেই ক্রিকেট দেখেছি। তাই যুবির আউটের সময়, খুব কষ্ট পেয়েছিলাম। ভাবছিলাম, এবার ইন্ডিয়া হেরে গেলে, আমার যুবির কী হবে! ওর কেরিয়ারটা তাহলে শেষ! সে তো একদিন সবারই হয়। কিন্তু এভাবে কেন শেষ হবে আমার যুবির কেরিয়ার! ভাগ্যিস বিরাট ম্যাচটা জিতিয়ে দিল। আজ বিরাট জেতাচ্ছে। কিন্তু ক'বছর আগে যে আমার যুবিও ইন্ডিয়াকে এভাবেই বলে বলে ম্যাচ জোতাতো। যাক বিরাটের জন্য ইন্ডিয়া আজ বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে।
৩) মনটা ম্যাচের পর আরও খারাপ হয়ে গিয়েছে। কারণ, ক্যাপ্টেন ধোনি ততক্ষণে প্রেস কনফারেন্সে বলে দিয়েছে যে, যুবি পরের ম্যাচে খেলতে পারবে কিনা, ও নিশ্চিত নয়। যদি যুবি ফিট না হয়ে ওঠে, তাহলে ওর অপশন রেডি আছে। রাহানেই বোধহয়। এটা শুনে মনটা সবথেকে খারাপ হয়ে গেল। সত্যিই তো। ঠিকই তো বলেছে ধোনি। ওকে তো যুবির পরিবর্ত তৈরি রাখতে হবে। কিন্তু এবার আমার কথা ভাবুন তো? যুবি যদি সেমিফাইনালে খেলতে না পারে, তাহলে ওর কষ্টটা বুঝতে পারছেন! আর ওকে কীভাবে সামলাবো, ভেবে আমারই তো বুক কাঁপছে।
৪) জানি না, চোটটা ওকে ঠিক কতটা ভোগাবে। খুব ঈশ্বরকে ডাকছি, যাতে সেমিফাইনালটা খেলে দিতে পারে। নাহলে মনে মনে শেষ হয়ে যাবে আমার যুবি। ইন্ডিয়া টিম থেকে বাদ পড়ে যাওয়ার পর আমি ও ওকে খুব কাছ থেকে দেখেছি। খুব বলতো, আমি ক্রিকেট আরও খেলতে চাই। আমি আবার ইন্ডিয়া টিমে ফিরতে চাই। ওকে বোঝাতাম, এত তো খেলেছো। দেশকে দুটো বিশ্বকাপ জিতিয়েছো। তাহলে এখনও এত টেনশন কেন নিচ্ছো? যুবি বলতো। দুটো জিতেছি তো কী হয়েছে! আমি আরও একটা বিশ্বকাপ জিততে পারি। অবেশেষ সেই সুযোগ পেলও। কিন্তু জানি না, চোটটা থেকে ও বেরিয়ে আসতে পারবে কিনা। না পারলে, ওর স্বপ্নটা শেষ হয়ে যাবে। আমারও।
৫) ভাবছি কটা দিন মরিশাসে ঘুরে আসবো। আসলে আমার শরীরে ব্রিটিশ আর মরিশাসের মেলানো রক্ত যে। সেখানে গেলে যদি যুবির মনটা একটু ভালো হয়। কিন্তু ঠিক জানি হবে না। একটাই ওর মনকে ভালো করতে পারে। তা হলো, সেরে উঠে ও যেন সেমিফাইনালটা খেলতে পারে। আর বিশ্বকাপ ফাইনালে দেশকে তুলতে পারে। আর এখন থেকেই শুনতে পাচ্ছি, যুবির দাদা মহারাজের শহরে ফাইনালে গ্যালারিতে গিয়ে যখন যুবির ব্যাট থেকে বিশাল ছক্কাগুলো পড়ছে, তখন গর্জন উঠছে, 'যুবি, যুবি, যুবি, যুবি'। ওর স্ত্রী হয়ে কানে যে শুধু এই আওয়াজটাই শুনতে চাই। আপনারা প্লিজ আমার জন্যও একটু প্রার্থনা করবেন। যেন আমি এটা শুনতে পারি। তাহলে আমিও জানি, যুবি আপনাদেরও এর প্রতিদান দেবে। ঠিক টি২০ বিশ্বকাপটা জিতিয়ে দেবে। যেমন এর আগে দুবার করেছে। তিন সত্যি হবে না?
(না, হেজেল কিচ এই লেখাটা লেখেননি। লিখেছেন স্বরূপ দত্ত। কিন্তু হেজেলও কি এই কথাগুলোই লিখতেন না?)