রোজ ৫৮ কিমি সাইকেল চালিয়ে লকডাউনে দায়িত্ব পালনে অবিচল দমকল কর্মী সুনন্দন
লকডাউনের সময় বাড়িতে বসে থাকার প্রশ্নই ওঠে না। বাড়ি নদীয়ার চাকদা পুরসভার অন্তর্গত কুড়ি নম্বর ওয়ার্ডে। আর কর্মস্থল শান্তিপুরে।
অধীর রায় — একদিকে লকডাউন আর অন্যদিকে কর্মস্থলের দায়িত্ব। এই জাঁতাকলে পড়েও নিজের দায়িত্ব পালনে অবিচল সুনন্দন কর্মকার। সুনন্দন দমকল বিভাগের একজন কর্মী। জরুরি পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত। ২০০৪ সালে ফায়ার ফাইটার হিসেবে কাজে যোগ দেন। এরপর ২০০৮ সালে শান্তিপুরে ফায়ার ইঞ্জিন ড্রাইভার কাম অপারেটর হিসেবে যোগ দেন। তাই লকডাউনের সময় বাড়িতে বসে থাকার প্রশ্নই ওঠে না। বাড়ি নদীয়ার চাকদা পুরসভার অন্তর্গত কুড়ি নম্বর ওয়ার্ডে। আর কর্মস্থল শান্তিপুরে। অফিসে স্টাফ কম থাকায় দুটো দায়িত্ব একসঙ্গে সামলাতে হয় তাঁকে। তাই লকডাউনের পর থেকে প্রতিদিন ৫৮ কিলোমিটার রাস্তা সাইকেল চালিয়ে কর্মস্থলে নিজের দায়িত্ব সামলাচ্ছেন সুনন্দন।
এমনিতে প্রতিদিন ট্রেনেই যাতায়াত করেন তিনি। লকডাউনের দিন কর্তব্যরত অবস্থায় শান্তিপুরে আটকে পড়েন সুনন্দন বাবু। অফিস থেকে বাড়ি ফেরার জন্য কোনও গাড়ির ব্যবস্থা ছিল না। অফিস জানিয়ে দেয়, বাড়ি থেকে যাতায়াতের জন্য কোনও গাড়ির ব্যবস্থা করা যাবে না। কিন্তু জরুরি পরিষেবার জন্য ছুটিও নেওয়া যাবে না। এই অবস্থায় সুনন্দন বাবু সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন, কীভাবে তার কর্মস্থলের দায়িত্ব পালন করবেন! এরপর অফিসের কাছে এক বন্ধুর কাছ থেকে সাইকেল নেন। লকডাউনের দিন সাইকেল চালিয়ে বাড়ি ফেরেন। তারপর সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন, লকডাউন চলাকালীন তিনি সাইকেল চালিয়েই শান্তিপুরে কর্মস্থলে পৌঁছবেন।
আরে পড়ুন— লকডাউনের বাজারে দোকান খুলতে মানা, দাদাকে 'ঘরবন্দি' করলেন ভাই!
এখন প্রতিদিন ৫৮ কিলোমিটার রাস্তা সাইকেল চালিয়ে বাড়ি থেকে অফিস, আর অফিস থেকে বাড়ি করছেন। প্রথম দুদিন খুব কষ্ট হয়েছিল। এখন অনেকটাই অভ্যাস হয়ে গিয়েছে। প্রতিদিন এই ধকলের পর কর্মস্থলে গুরু দায়িত্ব পালনে সমস্যা হয় না? এই প্রশ্নে সুনন্দন জানান, "এমন একটা পেশার সঙ্গে জড়িত, যেখানে আবেগের কোনও দাম নেই। কর্তব্যই বড় কথা।" কাজের জায়গায় সুনন্দনের এই নিষ্ঠায় গর্বিত তার সহকর্মীরা। শান্তিপুরের ফায়ার সার্ভিসের ইনচার্জ শ্যামসুন্দর পন্ডিত জানান, "দুরে বাড়ি হওয়ায় এখানে অনেক স্টাফ থেকে গিয়েছেন। কিন্তু লকডাউনের সময় বাড়ি এবং কর্মস্থল, সুনন্দন বাবু যেভাবে দুটো সামলাচ্ছেন তা আমাদের প্রেরণা যোগাচ্ছে।" বাড়ি থেকে সাইকেলে চেপে সুনন্দন কর্মকারের তিন ঘণ্টার বেশি সময় লাগে। তাই বাড়ি থেকে বেরোতে হয় খুব সকালে।