Kartikeya: 'একবার আসে মায়ের সাথে একবার আসে একলা'

পুজো-আচ্চার ক্ষেত্রে হয়তো একদা একটা 'ব্রিদিং স্পেসে'র প্রয়োজন পড়েছিল বাঙালির।

Updated By: Nov 15, 2021, 02:52 PM IST
Kartikeya: 'একবার আসে মায়ের সাথে একবার আসে একলা'

সৌমিত্র সেন

চালু লব্জটা হল-- 'কার্তিক ঠাকুর হ্যাংলা/একবার আসে মায়ের সাথে একবার আসে একলা'! মজাটা হল, আমাদের চেনাজানা সব দেবদেবীই 'একলা' আসেন, কিন্তু কাউকেই 'হ্যাংলা' অভিধায় ভূষিত হতে হয় না। মা দুর্গার সঙ্গে মর্ত্যধামে এসে চারদিন জমিয়ে পুজো পান লক্ষ্মী, সরস্বতী, গণেশও। এবং মায়ের সঙ্গে আসার আগে-পরে তাঁরা একলা-একলাও মর্ত্য়ে আসেন। কিন্তু যত সমালোচনা কার্তিকের বেলাতেই। আলাদা করে মর্ত্যে পুজো নিতে এসে তাঁকেই এই ধরনের মানুষী ব্যঙ্গ-বিদ্রুপের মুখোমুখি হতে হয়।

আসলে ধর্মে-কর্মে ঘোর সিরিয়াস পাঁজি-তিথি-নক্ষত্র-মন্ত্র-তন্ত্র শাসিত বাঙালির পুজো-আচ্চার ক্ষেত্রে হয়তো একটা 'ব্রিদিং স্পেসে'রও প্রয়োজন পড়েছিল কোনওদিন। এমন একটা পুজোর আয়োজন তার মন চাইছিল, যে-পুজোটা অত কড়া নিয়মবদ্ধতায় উদযাপন না করলেও চলে হয়তো; অধিকাংশ দেবদেবীই তো রোষকষায়িত, পান থেকে চুন খসলে এই বুঝি রেগে শাপটাপ দিয়ে দিলেন! বড় ভয়ে-ভয়ে কম্পিতহৃদয়ে অন্য সব পুজো সামলাতে হয়। কিন্তু এই একটিই একান্ত আপন পুজো আছে বাঙালির আস্তিনে, যে-পুজোর ঠাকুরটিকে নিয়ে দিব্য মজায় মত্ত হওয়া চলে। এর মূর্তি নির্ভয়ে অন্যের দোরগোড়ায় ফেলে আসা চলে, এর মূর্তি নিয়ে নানা ছেলেখেলাও করা চলে। এমনকি এই ঠাকুরটির সঙ্গে সরাসরি নানা মজাও করা চলে। যেমন একে জিনস পরানো চলে, এর চোখে গগলস পরানো চলে, এর যমজ মূর্তি পুজো করা চলে, এর অতিকায় মূর্তিকে নির্দ্বিধায় 'ধেড়ে' নাম দেওয়া চলে... ইত্যাদি ইত্যাদি।

আর এই সব জিনিসই সামাজিক মান্যতা পেয়ে গিয়েছে। নববিবাহিত দম্পতি যাঁদের সন্তানাদি হয়নি, তাঁদের সন্তান কামনায় কার্তিকমূর্তিকে সন্তানের প্রতীকেও রূপান্তরিত করা গিয়েছে অনায়াসে। এ নিয়ে কোনও শাস্ত্রবিদ কোনও গোল বাধাননি। সম্পূর্ণ শারীরবৃত্তীয় একটি বিষয়, বা যে কোনও দম্পতির কাছে যা একেবারেই একান্ত ব্যক্তিগত নিজস্ব সিদ্ধান্তের গোপন প্রশ্ন, বা যে-বিষয়টির মধ্যে যৌনতার একটা সুদূরতম গন্ধও আলগোছে নিহিত থেকে যায়-- তার সবটার সঙ্গে কার্তিকপুজোকে ঘিরে এক দৈব পিকনিকের মাধুর্য জড়িয়ে গিয়েছে। কার্তিক মাসের কার্তিক পুজো এ ভাবেই তাই ক্রমশ এক অমল মজার সঙ্গে অন্বিত হয়ে পড়েছে আগাগোড়া।

আর একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য আছে এ পুজোর। নিজে থেকে উদ্যোগ নিয়ে ঠাকুর কিনে এনে কার্তিক পুজো সাধারণত খুব কম লোকই করে থাকেন। এ পুজো স্বেচ্ছায় না করে 'অপরার্থে' করাই রীতি দাঁড়িয়েছে বহুদিন ধরে। 'অপরার্থে' মানে বুঝতে হবে-- অপরের প্ররোচনায়, অপরের উদ্যোগে, অপরের মজায় রসদ জোগানোর লক্ষ্যেই অধিকাংশ সময়ে এ পুজো আয়োজিত হয়ে থাকে। অর্থাৎ, মোটেই আত্মনেপদী নয় এ পুজো; বরং এ পুজো ঘটনাচক্রে ঘোরতর ভাবে এক পরস্মৈপদী পুজোয় পর্যবসিত। 

(Zee 24 Ghanta App: দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির লেটেস্ট খবর পড়তে ডাউনলোড করুন Zee 24 Ghanta App)

আরও পড়ুন: #উৎসব: 'মেজ মা'! রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের সূত্রেই শুরু হয়েছিল এই জগদ্ধাত্রী আরাধনা

.