অনিরুদ্ধ চক্রবর্তী
অনিরুদ্ধ চক্রবর্তী ''আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো ২১-এ ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলতে পারি!''
আমাদের ছেলেবেলার দুর্গা দু'জন; আমাদের কলোনির দুর্গা, আমাদের যতীন দাস নগরের দুর্গা। একজনের নাম ছিল সেন্ট্রালের দুর্গা, অন্যজন পূর্বাশার দুর্গা। সেন্ট্রালের দুর্গাপ্রতিমা দেখলে মনে হত খুব চেনা মুখ। যেন এই মাত্র বলে উঠবেন, আয় দুধ-মুড়ি খেয়ে পড়তে বস। আর পূর্বাশার দুর্গা? রণরঙ্গিনী তার রূপ। আমাদের শৈশবের রণপ্ররোচনা।
এই দিনেই তো ভোরবেলা ডেকে দিতেন মা। বলতেন, "মহালয়া শুরু হয়ে গিয়েছে। উঠে পড়। তোর বাবা রেডিও চালিয়ে দিয়েছেন। শোন। উঠে পড়।" ধরমড়িয়ে উঠে পড়তাম। শুনতাম বীরেন্দ্রকিশোর ভদ্রের কণ্ঠে 'মহিষাসুরমর্দিনী' গীতি আলেখ্য। আধো ঘুম চোখে বেড়িয়ে আসতাম বাইরে। আকাশ দেখতাম। মনে হতো আকাশে মহিষাসুর বধ দেখছি।
আমি এখনও ঘুমিয়েই রয়েছি। সবাই অনেক চেষ্টা করছেন আমাকে ঘুম থেকে তোলার। কিন্তু আমার ঘুম ভাঙছে না। সবাই ভাবছে আমি খুব কষ্টে আছি। সবাই ইন্টারনেটে, ফেসবুকে আমাকে খুঁজে বেড়াচ্ছে। আমার আরোগ্য কামনা করে মোমবাতি জ্বালাচ্ছে। কিন্তু ওরা কেউ জানে না এক কদিনে কী আনন্দে আছি আমি। কোনও যন্ত্রণাই আমাকে স্পর্শ করছে না আমাকে। কোনও গুলির আওয়াজ শুনতে পাচ্ছি না আমি। কেউ আমাকে ধর্ষণ অথবা খুনের হুমকিও দিচ্ছে না। আমার চারপাশে আর কোনও আততায়ী নেই। আছে রাষ্ট্র প্রধানেরা। আমার নিজের দেশ থেকে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট, সবাই নাকি আমার খবর নিচ্ছেন, আরোগ্য কামনা করছেন। আসলে ওরা কেউ ঘুমতে পারছেন না। যদি পারতেন -তাহলে জানতেন ঘুমে কী অফুরন্ত শান্তি। কয়েকটা বুলেট যে ঘুম উপহার দিয়েছে এই কদিন। এখন আমি বুলেটকেও আর ভয় পাই না। ও আমার বন্ধু।
ডাঃ সিংহ সরকারি হাসপাতালে সরকারি বেতনে সাধারণ মানুষের চিকিত্সা করতেন। প্রাইভেট প্র্যাকটিস করলে যে কোনও দিন তুড়ি মেরে তিনি দশ গুণ রোজগার করতে পারেন। এটাকেই বেসরকারি হাসপাতালের মালিকরা ডাক্তারদের সম্ভাবনা বা 'পোটেনশিয়াল' বলে থাকেন। যে ডাক্তার অকারণে নিছক বিল বাড়ানোর জন্য প্যাথলজি টেস্ট করান না, তাঁকে ডেকে ওই সব হাসপাতালের ম্যানেজাররা বলেন, "ডাক্তারবাবু আপনার কিন্তু পোটেনশিয়াল আছে, আপনি একটু চেষ্টা করলেই আপনার পোটেনশিয়াল রিয়ালাইজ করতে পারেন।" পোটেনশিয়াল মাপা হয় লক্ষ টাকার এককে। রাজ্য সরকার সম্ভবত চাইছে ডাঃ সিংহ তাঁর পোটেনশিয়াল অনুযায়ী রোজগার করুন!!!
খুশির শিউলিফুল ভোর। দেরি করে মা আসছেন বলেই মেঘের ছমছমে ভাব উধাও। মহালয়া আসছে। পুজো মানে অনেক কিছু। সঙ্গে বাঙালির বাংলা পরীক্ষা শুরু। বানানে কেমন পাণিনি, সেটা আকাশ-বাতাসে দুলতে থাকা হোর্ডিং দেখলেই হৃদয়ঙ্গম হয়।
সালওয়া জুড়ুমের উত্স সন্ধানে গিয়েছি বিজাপুরের প্রত্যন্ত গ্রাম কারকেলিতে। সময়টা নভেম্বরের মাঝামাঝি। ছত্তিসগড় জুড়ে ভোটের হাওয়া। দু'দিন আগেই সুকমার কাছে ভোটকর্মীদের হেলিকপ্টার গুলি করে নামিয়েছে মাওবাদীরা। গ্রামবাসীদের সতর্কবাণী সত্ত্বেও কাজ মিটিয়ে জগদলপুরের পথ ধরতে না ধরতেই সুয্যিমামা ডুব দিলেন বস্তারের পাহাড় আর জঙ্গলের আড়ালে। প্রায় একশো ষাট-সত্তর কিলোমিটার পথ যেতে হবে। একে বিপদসঙ্কুল, তার উপর কোনও কোনও জায়গায় রাস্তা বলে প্রায় কিছুই নেই। মাওবাদী হানার ছাপ বহন করছে বিধ্বস্ত কালভার্ট।
শেষ! এই শব্দটার মধ্যে একটা মায়া আছে। একটা কান্নাও আছে বোধহয়। শেষ বলে কি কিছু হয়? আবার অন্য ভাবে ভাবলে শেষ তো হয়ই। জন্ম শব্দের মধ্যেই তো তার অস্তিত্বহীনতার কথা বলা আছে! জন্মিলে মরিতে হবে, অমর কে কোথা কবে। ইত্যাদি ইত্যাদি। শেষ মানে পূর্ণ ছেদ। এরপর আর কিছু নেই।
দৃশ্য-১ সিনেমা শুরু হতেই দেখা যায় ক্লাসরুমে বাঘের চেয়ার ফাঁকা পড়ে আছে। ক্যামেরা জুম চার্জ করে। ব্যাকগ্রাউন্ড স্কোরে প্ল্যাটফর্ম ছেড়ে পেরিয়ে যাওয়া ট্রেনের শব্দ। খানিক নিস্তব্ধতা। এরপর গুলি ছোঁড়ার পরপর ঠিস্স্ ঠিস্স্ আওয়াজ ও বাঘের আর্তনাদ, গর্জন।
মানুষ, অস্যংখ্য মানুষ, দুর্গত মানুষ, পীড়িত মানুষ, কষ্টে থাকা মানুষ, দুঃখ পেরিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়া মানুষ, কত মানুষের মুখোমুখি আমরা। এই মানুষদের ছুঁয়ে থাকার চেষ্টা করেছি আমরা। এই চেষ্টাই আমাদের মন্ত্র। মানুষকে ছুঁয়ে থাকার চেষ্টা। সেই মন্ত্রেই আরও একবার দীক্ষা নিয়ে ২৪ ঘন্টার ওয়েবসাইটের নতুন যাত্রা।
নিলাম বনাম বৃহত্তর মঙ্গল বিতর্কে অত্যন্ত সুবিবেচনাপ্রসূত রায় দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। আমাদের দেশে রাজনীতি পরিচালিত হয় আবেগ, অজ্ঞতা এবং দুষ্টবুদ্ধির ত্রিফলা দ্বারা। প্রায়শই এই ত্রয়ীর মধ্যে তীব্র প্রতিযোগিতা চলে কে অন্যদের পিছনে ফেলে রাজনীতির উপর তার দখলদারি আরও বাড়াতে পারে, তার।
পাঠকেরা চোখ বুজুন। ভাবুন, আপনার বাড়িতে ঠিকে কাজ করেন যিনি, তাঁকে হঠাত্ দেখলেন, মঞ্চে সারাজীবনের অবদানের জন্য পাচ্ছেন আস্ত একটা ট্রোফি, চেক আর সম্মানপত্র। দর্শকাসন থেকে শর্বরী দত্ত, মমতা শঙ্কর, গার্গী রায়চৌধুরী, দোলন রায়, অনুপম রায় উঠে দাঁড়িয়ে অভ্যর্থনা জানাচ্ছেন! হাততালির আওয়াজে কানের পরদা ফেটে যাচ্ছে।
আজ আমাদের যেকোনও আড্ডায় হামেশাই বলি কাউকে না কাউকে, কী রে, কী হল? এত aloof কেন? কোনও প্রবলেম? কথাটা যেহেতু প্রায়ই বলি, তাই এই aloofness নিয়ে আমরা খুব একটা মাথা ঘামাই না, তার প্রবলেম নিয়েও বিশেষ উদ্বিগ্ন হই না। এই aloofness-ই তো একধরনের alienation! যে alienation ব্রেখটের নাটকে পেয়েছি আমরা অসাধারণভাবে।
তারিখটা ঠিক মনে নেই। ২০০৬-০৭ সাল হবে। কলকাতার এক পাঁচতারা হোটেলে উঠেছেন রাজেশ খন্না। খবর পেয়ে হোটেলের পাবলিক রিলেশন ম্যানেজারের মারফত ফোনে যোগাযোগ করলাম। হোটেলের রুমে ফোনটা কানেক্ট করতেই ওপারে গম্ভীর অথচ মৃদু কণ্ঠস্বর, 'ইয়েস, স্পিকিং।'কাঁচুমাচু গলায় অনুরোধ করি একটা ইন্টারভিউয়ের জন্য।
মাঝে মাঝেই জানতে ইচ্ছে করে, কলকাতার গরিব মানুষেরা ঠিক কী খায়। এই ২০০ টাকা কেজি লঙ্কা আর ৪০ টাকা কেজি আলুর শহরে যেখানে মধ্যবিত্ত মানুষই কোনো রকমে ঘাড় গুঁজে সক্কাল সক্কাল বাজার থেকে ফিরে প্লাস্টিক উপুড় করে দিয়ে দেখে দুমড়ানো পটল...
এক বিরল প্রাণীর আবির্ভাবে তোলপাড় শহর, মফস্বল, গাঁ। বাসে- ট্রামে, রকে, চায়ের ঠেকে জোর জল্পনা তাকে নিয়ে। পিঙ্কি প্রামাণিক। উত্সুক জনতার উদগ্র কৌতূহলের কেন্দ্রে সোনাজয়ী এই অ্যাথলিট। তাঁকে একঝলক দেখতে SSKM এর চাতাল, সিঁড়ি, এমনকি অনাদরে বেড়ে ওঠা অপুষ্ট গাছগুলো ভরে উঠেছে। পিঙ্কির বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ এনেছেন জনৈক মহিলা। তাঁর অভিযোগ, পিঙ্কি আসলে পুরুষ।
By continuing to use the site, you agree to the use of cookies. You can find out more by clicking this link