তুমি ঠোঁটে নিও খড় কুটো...

তুমি ঠোঁটে নিও খড় কুটো...

তুমি ঠোঁটে নিও খড় কুটো...ভালবাসা মানে কী জেন ওয়াইয়ের কাছে শুধুই আর্চিস গ্যালারি? এই প্রজন্ম প্রেমের মানে বোঝে না, গুরুত্ব দেয় না সম্পর্কের গভীরতায়, এই সব সমালোচনাতো কান পাতলেই মুখিয়ে থাকে নতুনদের জন্য। আমাদের অভিজ্ঞতা কিন্তু অন্য বার্তা দিচ্ছে। একাল হোক বা সেকাল প্রেমের ম্যাজিক কিন্তু আজও একই রকম, চিরন্তন। হ্যাঁ, এখন হয়ত চ্যাট ফ্রেন্ড, ব্লাইন্ড ডেট,আর্চিস, সিসিডি, মাল্টিপ্লেক্স-এর মত কিছু শব্দ যোগ হয়েছে প্রেমিক-প্রেমিকাদের ডিকসেনারিতে। তাতে ক্ষতি কী? ওনলাইন প্রেমের সঙ্গেই কিন্তু আজও একই ভাবে প্রাসঙ্গিক অভিমানী চোখের ভালবাসার বন্যা। দূরভাষ নিশ্চুপে অনুভূতির হাসি শোনার জন্য এই প্রজন্মের কানও একই ভাবে অপেক্ষা করে থাকে। আমাদের ছোট্ট অভিজ্ঞতার ঝুলি থেকে কিছু নিয়ে এলাম আপনাদের জন্য। হয়ত এদের মধ্যেই আপনি খুঁজে পাবেন আপনাকেও, আপনাদের সম্পর্ককেও।

অমর্ত্য আর বৃষ্টি

দু`জনের আলাপ ক্লাস ইলেভেনে। কেমিস্ট্রি টিউশনে। একজন বালিগঞ্জ গভরমেন্টের অন্যজন পাঠভবনের। বন্ধুত্বের সম্পর্কটা ঠিক কবে যে `বিশেষ` হয়ে গিয়েছিল তা ঠিক টের পায়নি কেউই। কিন্তু বৃষ্টিকে দেখলেই অমর্ত্যর হার্টটা যবে থেকে ভীষণ রকম লাগাম ছাড়া বেয়াদপি শুরু করল, তখন আর বিলম্ব করেনি অমর্ত্য। কপালঠুকে প্রিয় বন্ধুকে মনের কথা জানিয়েই দিয়েছিল। বৃষ্টিও হ্যাঁ বলতে সময় নেইনি। তারপর কেটে গেছে পাক্কা দু`টো বছর। এখন দু`জনের প্রেম বেশ জমাটি। এনআরএসের ডাক্তারির সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্র অমর্ত্য আর কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং-এর ছাত্রী বৃষ্টির কাছে ভ্যালেন্টাইনস ডের আলাদা করে কোনও গুরুত্ব নেই। তাদের কাছে এখন সব দিনই ভালবাসায় লুটোপুটি খাওয়া।

তবে ভ্যালেন্টাইনস ডে নিয়ে বিশেষ মাথা ব্যাথা না থাকলেও গিফট নিতে আপত্তি নেই বৃষ্টির। অমর্ত্যতো স্পষ্ট জানিয়েই দিল পকেটে পয়সা এলেই প্রেমিকাকে তুষ্ট করতেই মোটামুটি তা বেরিয়ে যায়। এই কথাতে অবশ্য সোচ্চার প্রতিবাদ জানাল বৃষ্টি। শুরু হয়ে গেল নকল ঝগড়া। ওই যেমন হয়, ওই যেমন হত, সব প্রেমের মাঝখানেই, মাঝে মধ্যেই।

ভ্যালেন্টাইনস ডে আর তার পরের দিন সরস্বতী পুজোর দিন এই দুই জুটি কিন্তু ঘুরতে বেড়বে। উঁহু। প্রেম করতে নয়। স্রেফ ঝাড়ি করতে। বছরের বাকি দিনগুলোতে থাকেই নিজেদের জন্য। এই দু`দিন ঝাড়ি নিবেদিত প্রাণ। আর নিজেদের ঝাড়ির অভিজ্ঞতা অমর্ত্য আর বৃষ্টি শেয়ার করে নেবে নিজেদের মধ্যেই। গভীর প্রেমের মধ্যে একঝলক তাজা বন্ধুত্ব কি উঁকি দিয়ে গেল? গেল বোধ হয়। তুমি ঠোঁটে নিও খড় কুটো...
নীল আর অর্চির

নীল আর অর্চি। একজন চাকুরিরতা অন্যজন ছাত্রী। দুই সমপ্রেমী। এক সংগঠনের সূত্রে দু`জনের পরিচয়। প্রথমে বছর চারেকের বন্ধুত্ব। তারপর বন্ধুত্বের সীমা পেরিয়ে গত দু`বছর ধরে তাদের প্রেম জীবন শুরু।

নিজেদের সম্পর্ক নিয়ে কিছু বলতে গেলেই খুশিতে চিক চিক করে ওঠে দু`জনের চোখ মুখ। অর্চির অমোঘ আকর্ষণ তাকে ছুটিয়ে বেড়ায়। সল স্বীকারোক্তি নীলের। রাগারাগি, ঝগড়াঝাটি, খুনসুটি, মারপিট সব কিছুর মধ্যেই জড়িয়ে আছে তাদের ভালবাসা। চোখ বন্ধ করে হাত বাড়ালে যে হাতটা আমার হাত ছুঁয়ে যাবেই সেটা অর্চির। জানাল নীল।

নীল আর অর্চি স্বপ্ন দেখে ঘর বাঁধার। কলেজছাত্রী অর্চি জানাল তারা একটা বাচ্চাকেও দত্তক নিতে চায়।

মধুর স্মৃতিঃ

অর্চি- এটা একটা `বিষাক্ত উদাহরণ`। আমাকে বেশ কয়েকবার পাত্রপক্ষের সামনে বসতে হয়েছে। একবার আমি খুব কান্নাকাটি করছিলাম। বাড়ির কেউ শুনছিল না। আমি ওকে(নীল) ফোন করে ডাকি। মনে আছে সন্ধে তখন সাতটা। ও অফিস শেষ করে রুবির মোড়ে আসে। অটোয় বসে ও আমার হাতটা ধরে বলেছিল। "চল আমি তো আছি তোর পাশে"। সেটা আমার সবচেয়ে মনে রাখার মত স্মৃতি।

নীল- যে বার কলকাতায় সমকামীদের নিয়ে কার্নিভাল হল। সেবার আমরা সবাই খুব মজা করেছিলাম। মুখ রাঙিয়েছিলাম। মনে আছে। পরের দিন কলকাতার এক প্রথম সারির সংবাদপত্রে অর্চির হাসি মুখের ছবি বেরোয়। তার ওপর লেখা, সমকামীদের প্রথম উৎসব। কাগজটা অর্চির বাড়ির লোকের হাতে পড়ে। আমার মনে আছে ওর ঘরে ওর আর ওর মায়ের কথোপকথন কথোপকথন গোটাটাই শুনেছিলাম ফোনে। যখন ওদের দু`জনের মধ্যে কথা হচ্ছে, আমি তখন লাইনে আছি। ও স্পষ্ট করে ওর মাকে বলে দেয়, আর কত দিনে তুমি বিশ্বাস করবে আমি লেসবিয়ান? আমি সেদিন ওর বুকের জোড়টা বুঝেছিলাম। ও এখন দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী। ওর কোনও প্রতিষ্ঠা নেই। তাও ও সাহস করে সবটা বলতে পেরেছিল সেদিন।

যারা নতুন নতুন প্রেমে পড়ছে, তাঁদের জন্য এই দুই ভালবাসার মানুষের ছোট্ট বার্তা ``ভাবনাগুলো বাক্সবন্দী করে রেখ না। ভালবাসার অনুভূতিকে দাও মুক্তির উড়ান।``

১৪ ফেব্রুয়ারির প্ল্যানঃ এক সঙ্গে ঘোরা, সিনেমা দেখা আর রাতে কোথাও একটা ডিনার।










First Published: Saturday, February 09, 2013, 16:28


comments powered by Disqus