ছিপ নৌকো

ছিপ নৌকো

ছিপ নৌকোকুশল মিশ্র

এই শহরে আমার কোনও বন্ধু ছিল না। ছিল উন্মাতাল ছিপ নৌকার মত এক বিষণ্ণ কিশোরী। সে আমাকে মাঝে মাঝে চিঠি লিখত। আমি তার নিঃসঙ্গতা কোনদিন স্পর্শ করিনি। পালকে শোকের চিহ্ন দিয়ে আমি আজ আমি পলাতক। তুমি জানলে না...এই পর্যন্ত । তারপর থেমে গেল কলম। মুখখানা খুব স্পষ্ট। নরম একফালি রোদ্দুরের মত। যা নাকি জাম আর জামরুলের পাতায় এক টুকরো হাসির মত লেগে থাকে। সেভাবেই...

শহরের ইট ইমারতের জঙ্গলে সবে পা ফেলেছি। মেসে থাকি। সকালে বেরোই রাতে ফিরি। চলছে চাকরির খোঁজ। পকেটমানি ওঠে টিউশনে। রাতে একটু জীবনানন্দ, বনলতা সেন, সুনীল, শক্তি, সন্দীপন। বুঝতে পারছেন তো? মানে রাতে বিছানায় গা এলিয়ে একটু ইয়ে ইয়ে হয় আর কী? বিছানা পুড়ে যায়। অ্যাস্ট্রে ভরা ছাইয়ের স্তুপ। তারপর... মেসের এক লঝঝরে খাটিয়ায়, খটখটে আওয়াজ তোলা ফ্যানের আওয়াজে ঝিমুনি...ঘুম।

একদিন দেখেছিলাম হনহন করে হাঁটতে হাঁটতে। ভাঙা চোরা চুনখসা ইঁটের পাঁজরে কোটরে বসা ঘর অন্ধকার জানালায়। পাতার গায়ে লাজুক রোদের হাসি। তারপর থেকেই দেখি, আর যাই। হনহন করে হাঁটতে হাঁটতে বাড়িটা আসলেই স্লো-মোশন। ধীরে ধীরে হাঁটা। জানলার কাছে নকল ফোনালাপ। এসব অছিলা...

স্লো-মোশনে যাচ্ছি। জানালা। একফালি রোদ্দুর। দু-পায়ের কাছে পড়ল কাগজ মোড়ানো ঢিল। কুড়িয়ে নিয়ে হনহনে হাঁটা।

সারা দিন খুলে দেখিনি। রাতে মেসের খটখটে ফ্যানে, একশ পাওয়ারের বাল্বের আলোয় টানটান মোড়ানো কাগজ।  ছিপ নৌকো
পাতায় কোন লেখা নেই। শুধু একটা ছবি। নদী কাগজে ভাসছে একটা ছিপ নৌকা।

ফাস্ট-ফরোয়ার্ড টাইম, এখন কর্পোরেট অফিসে বসি। সুন্দরী স্ত্রী। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত গাড়ি, তিন বছরের বনি (আমার ছেলে ) বড় বল নিয়ে হামাগুড়ি দেয়। শরীরে রুটিনস্কচের মেদ। ১৪ ফেব্রুয়ারি ভ্যালেনটাইন ডে। লেখাটা জমা দিতে হবে। মদ খেয়েছি অনেকটা। ঘন নেশায় ঝাপসা দেওয়াল।

পৃথিবীর পাড় ভাঙছে। এক খণ্ড মাটিতে দাঁড়িয়ে মৃত্যুর অপেক্ষায়। এসেছে ছিপ নৌকোর বিষন্ন কিশোরী।

আমার একখণ্ড মাটি এখন নদী। ভেসে চলেছি ছিপ নৌকায়।




First Published: Friday, February 15, 2013, 12:09


comments powered by Disqus